গাজীপুরের কালীগঞ্জে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এস এম এমদাদুল হক আকলুকে (৬৫) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ৪ জন আহত হন। নিহত আকলু মুক্তারপুরের রামচন্দ্রের গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি মুক্তারপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় কালীগঞ্জ উপজেলার মুক্তারপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় নাশু মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কর্মকর্তা মারুফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাবলু মিয়া দাবি করেন, আকলুকে আওয়ামী লীগের লোকজন পিটিয়ে হত্যা করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরই সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম তোরণের অফিস ও বাড়িতে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন রাথুরা গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৫), ফাইজ উদ্দিন শেখের ছেলে মঞ্জু শেখ (৬৫), রামচন্দ্রপুর গ্রামের ইসমাইল শিকদারের ছেলে সীমান্ত শিকদার ঈমন (২৪) এবং বজলুর সরকারের ছেলে মেহিদী হাসান সরকার (৩১)।
স্থানীয়রা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং সাবেক চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম তোরণের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামানের (ট্রাক) প্রতীকের পক্ষে মৌন সমর্থন দেন এমদাদুল হক আকলু গ্রুপের লোকজন। একই ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক প্রতিপক্ষ নূর মোহাম্মদ গ্রুপ সরাসরি সমর্থন দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির (নৌকা) প্রতীকের পক্ষে। নির্বাচনের পর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সম্প্রতি দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
তারা আরও জানান, শুক্রবার আকলু গ্রুপের লোকজন নূর মোহাম্মদ গ্রুপকে আওয়ামী লীগের দালাল বলে এলাকায় প্রচার চালায়। সকাল ১০টার দিকে আকলুর নেতৃত্বে ১০-১২টি মোটরসাইকেলে নেতাকর্মীরা এলাকায় মিছিল করে স্থানীয় নাশু মার্কেট এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় নূর মোহাম্মদ গ্রুপের ৩০-৪০ জন তাদের ধাওয়া করে এবং আকলুকে আটকে পিটিয়ে আহত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
মুক্তারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক বাগমার নয়ন জানান, এমদাদুল হক নাশু মার্কেট এলাকায় অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে তার ওপর হামলা করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাবলু মিয়া বলেন, ‘গেলো আন্দোলনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন আকলুকে ধরে পুলিশে দিয়েছিল। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম তোরণ এবং সবুর মেম্বারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১০-১৫ জন লোক তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।’
গাজীপুর জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন, ‘এমদাদুল হক আকলু দলীয় কোন্দল নিহত হয়েছে কি না কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নিন।’
কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কর্মকর্তা মারুফ হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ জড়িত রয়েছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে। এ ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
