অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘রক্তের বিনিময়ে এ স্বাধীনতার প্রথম সুবিধাভোগী হওয়া উচিত দেশের মেহনতি মানুষ, বিশেষ করে শ্রমিকরা। গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিক ও মেহনতি মানুষদের পরিশ্রম আছে বলেই দেশ সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতির পরও টিকে আছে। গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য পেনশন স্কিম চালু করার স্বপ্ন আছে আমার। এটা করতে সময় লাগলেও আমরা কাজটা শুরু করে দিতে চাই। এটা বাস্তবায়নের জন্য মালিকপক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। পেনশন স্কিম চালু করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারবো বলে আশা রাখছি। আন্দোলনে শ্রমিকরাও রক্ত দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় শতাধিক শ্রমিক শহীদ হয়েছেন।’
বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১১টায় টঙ্গীর পাগাড় এলাকায় জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিকস লিমিটেড কারখানায় পোশাকশ্রমিকদের সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রয় কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি তেল ও দুই কেজি ডাল রয়েছে। শ্রমিকদের প্রতি মাসের পাওনা বেতন থেকে টিসিবির পণ্যের মূল্য বাবদ ৪৭০ টাকা কেটে নেওয়া হবে। আজ এ কারখানার এক হাজার শ্রমিকের হাতে টিসিবির পণ্য তুলে দেওয়া হয়। পরে কয়েকটি ধাপে কারখানার ১৩ হাজার শ্রমিককে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। দেশের প্রায় অর্ধাংশ বন্যাকবলিত হয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে এখনও পুনর্বাসনের কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় ১৬ বছর পর গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আমরা স্বাগত জানাই। শ্রমিকরাও তাদের দাবিগুলো আমাদের কাছে নিয়ে এসেছে। শ্রম অঞ্চলে অসন্তোষ সৃষ্টির জন্য বহিরাগতরা প্রবেশে করেছে। আমরা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও মালিকপক্ষসহ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বারবার বসেছি। শ্রমিকদের ১৮ দফার দাবির মধ্যে যেগুলো অল্প সময়ে সমাধান করা যায় সেগুলোর বাস্তবায়ন চলমান আছে।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের রেশনিংয়ের যে দাবি ছিল, সেটা শ্রম অঞ্চলে টিসিবির মাধ্যমে আমরা স্বল্প মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করছি। অচিরেই সমস্ত শ্রমঘন অঞ্চলে টিসিবির কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে পারবো।’
গার্মেন্ট মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি শ্রমিকদের ভালোটা দেখেন তাহলে আপনাদেরও ব্যবসার উন্নতি হবে এবং সরকার আপনাদের জন্য পৃথিবীর বায়ারদের কাছে দেনদরবার করতে পারবে। তারা যখন আমাদের কাছে শ্রমিকদের সমস্যার বিষয় নিয়ে আসে, তখন আমরা যদি তাদের আশ্বাস দিতে পারি, তারাও আশ্বস্ত হয় এবং আরও বায়ারদের বাংলাদেশে আসার জন্য আহ্বান জানাতে পারে। এত বড় একটা পরিবর্তনের পরও যথেষ্ট ধৈর্য ধরে গার্মেন্টস সেক্টরকে চলমান রেখে আপনারা টিকে আছেন, সেজন্য ধন্যবাদ জানাই।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস মেনুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সচিব ফারজানা শিরিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা ইকবাল, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নাফিসা আরেফিন ও নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএম রফিকুল ইসলাম নোমান।