নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি পরিবহনের বাস রাখাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত আট জন আহত হয়েছেন। শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক মুক্তাঝিল আবাসিক এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব পাপ্পু, ফিরোজ, সজীব, ইসমাইল, নীলাচল পরিবহনের কর্মকর্তা আবুল হাশেম, হাসান মাহমুদ, আবু সিদ্দিক ও বিল্লাল হোসেন। সংঘর্ষে আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে নীলাচল পরিবহনের প্রায় ৩৫টি বাস মৌচাকের চিশতিয়া বেকারিসংলগ্ন একটি খালি মাঠে ভাড়ায় রাখা হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে ওই পরিবহনের একটি বাস রাখার সময় এলাকার একটি মসজিদের কার্নিশের দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ওই এলাকার বাসিন্দা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মমিনুর রহমান বাবু ও এলাকাবাসী নীলাচল বাসের কর্তৃপক্ষকে ওই স্থান হতে বাস ডিপোতে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেন।
আরও জানা গেছে, এসব ঘটনার একপর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে বাস কর্তৃপক্ষ ও সেচ্ছাসেবক দল নেতাদের মধ্যে এক মাসের ভেতর বাসগুলো ডিপোতে সরিয়ে নেওয়া হবে মর্মে সমঝোতা হয়। পরে ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের মাধ্যমে নীলাচল পরিবহন বাস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে পুনরায় বসে সমাধানের আশ্বাস দেন। শনিবার (১৫ মার্চ) বিকালে উভয়পক্ষ আবারও বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসেন। সেখানে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মমিনুর রহমান বাবুর অনুসারীদের (সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব পাপ্পু ও তার লোকজনের) সঙ্গে ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের (সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবালের অনুসারীদের সঙ্গে) বাগবিতণ্ডা হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা ও ইটপাটকেল ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব পাপ্পু বলেন, ‘সম্প্রতি নীলাচল পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় মুক্তাঝিল আবাসিক এলাকার একটি মসজিদের কার্নিশের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও আমরা প্রতিবাদ জানাই এবং তাদের বাস ডিপোতে সরিয়ে নিতে বলি। বাস কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে সমঝোতা করে দুই মাসের সময় নেয়। এরপর বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ইকবাল হোসেনের (সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক) অনুসারী ও ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় ফিরোজ নামে আমাদের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করে এবং ইসমাইল নামে আরেক জনকে মারধর করে। তারা দুজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া আরো ৩-৪ জন আহত হয়েছেন।’
বহিষ্কৃত নেতা ইকবাল চাঁদাবাজি করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বহিষ্কৃত নেতা ইকবাল এই পরিবহনের ডিপো থেকে প্রতিমাসে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন। আমরা এই পরিবহনের বাস সরাতে বলায় তার বাহিনীর লোকজন ও অনুসারী দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’
এ বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মমিনুর রহমান বাবুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি গতকাল থেকে অসুস্থ। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে আমার লোকজন কাউকে হামলা করেনি। শুনেছি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা নীলাচল বাসের কর্তৃপক্ষের কাছে মসজিদের ক্ষতিপূরণের জন্য টাকা চেয়েছেন।’
নীলাচল পরিবহনের কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, ‘আমাদের একটি বাস আসার সময় পাশের মসজিদের লাইট ও কার্নিশ ভেঙে যায়। আমরা মিস্ত্রি নিয়ে সেসব মেরামত করতে গেলে মসজিদ কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান পাটোয়ারীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তার পক্ষ হয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবুর লোকজন আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় আমিসহ হাসান মাহমুদ, আবু সিদ্দিক, বিল্লাল হোসেন নামে চার জন আহত হই। তবে আমরা কাউকে মারধর করিনি।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নীলাচল পরিবহনের বাসকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপির উভয়পক্ষের অন্তত পাঁচ থেকে ছয় জন আহত হয়েছেন। এলাকাবাসীর ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’