নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৫২০ বোতল ফেনসিডিল ও ৫০ কেজি গাঁজাসহ আটকের পর আমির হোসেন নামের এক যুবদল নেতাকে ছেড়ে দিয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহর তদবিরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে জব্দকৃত ওই মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেখিয়ে একই এলাকার এক প্রতিবন্ধী যুবককে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (২০ মে) রাতে উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের পাড়াগাঁও এলাকা থেকে ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ আটকের পর যুবদল নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত আমির হোসেন ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক ও ভুলতা ইউনিয়নের পাড়াগাঁও এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে। পাশাপাশি আমিরের বাড়ি থেকে জব্দকৃত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেখিয়ে একই এলাকার প্রতিবন্ধী ইউসুফ মিয়াকে (২৬) কারাগারে পাঠানো হয়।
পাড়াগাঁও এলাকার একাধিক ব্যক্তি ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে যুবদল নেতা আমির হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। তার বাড়ি থেকে ৫২০ বোতল ফেনসিডিল ও ৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। সেইসঙ্গে আমিরকে আটক করে ডিবি। আটকের পর আমির জানান, এসব মাদকের সঙ্গে প্রতিবেশী ইউসুফ মিয়া সংশ্লিষ্ট। এরপর তাকে নিয়ে ইউসুফ মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ওই বাড়িতে কিছু না পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ইউসুফকে সঙ্গে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। ভোররাতে আমিরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মাদকসহ ইউসুফকে গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাড়াগাঁও এলাকার তিন ব্যক্তি জানিয়েছেন, ইউসুফ বাকপ্রতিবন্ধী। গরু খামার করেছেন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক সংশ্লিষ্টতার কোনও অভিযোগ নেই। সিগারেট পর্যন্ত খায় না। মূলত ছাত্রদল নেতা মাসুম বিল্লাহ এই এলাকায় মাদক ব্যবসা চালাচ্ছেন। তারই সহযোগী আমির হোসেন। তার বাড়ি থেকে ফেনসিডিল ও গাঁজা উদ্ধারের পর প্রতিবন্ধী ইউসুফকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন দুজনে। ঘটনাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করলে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়বে। ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে এ ঘটনায় নিরপরাধ এক ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জেনে-শুনে কাজটি করেছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
ডিবি পুলিশের এক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিরীহ ছেলেটাকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হলো। অথচ মূল অপরাধী আমির হোসেন। উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহর মদতে এলাকায় মাদক ব্যবসা করছেন আমির। তার বাড়ি থেকেই ৫২০ বোতল ফেনসিডিল ও ৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছিল ডিবি। অথচ তাকে ছেড়ে দিলেন ডিবির কর্মকর্তারা।
ইউসুফ মিয়ার মা জুলেখা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোমবার রাত ৩টার দিকে আমাদের এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আমির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ডিবি পুলিশ আমার বাসায় আসে। তারা জানতে চায় ইউসুফ বাসায় আছে কিনা। আমি ঘরের দরজা খুলে দিলে তারা সব কক্ষে তল্লাশি চালায়। কিন্তু কিছুই পায়নি। এরপর ইউসুফকে বাইরে যেতে বলে। আমি কারণ জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের এক সদস্য বলেন, তাদের স্যার কথা বলবেন। পরে জানতে পারি আমির হোসেনের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলোর সঙ্গে আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে সংশ্লিষ্ট দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অথচ যার বাসা থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে, সেই আমিরকে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি পুলিশ। আমি পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানাই, ঘটনাটি যেন সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়। মূলত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হয়। আমার নিরপরাধকে প্রতিবন্ধী ছেলেকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।’ অভিযুক্ত ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক আমির হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুল ইসলাম প্রিন্স বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনও ঘটনা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় তবে সাংগঠনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যার বাসা থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যজনকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মূল অপরাধীকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মাদকসহ একজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। যেহেতু ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে মূল অপরাধীকে ছেড়ে দিয়ে নিরাপরাধ একজনকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’