বাগেরহাটে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পাঁচ কোর্ট পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় এ নির্দেশ দেন। অর্থপাচারের একটি মামলায় আসামি নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদারকে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কারাগারে নেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, আদালতের দায়িত্বে থাকা পাঁচ পুলিশ সদস্য তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে কর্তব্যে অবহেলা করেছেন। তাই আদালতে কর্মরত ওই পাঁচ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
প্রত্যাহার করা পুলিশ সদস্যরা হলেন−সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রফিকুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, কনস্টেবল রঞ্জিত, আবুল হোসেন ও আব্দুস সোবাহান।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১১০ কোটি টাকা অর্থপাচার মামলার আসামি বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান তালুকদারকে প্রিজন ভ্যানে না উঠিয়ে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কারাগারে নেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে বিষয়টি বাগেরহাট পুলিশ সুপারের নজরে এলে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, সোমবার বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদার দুদকের করা ১১০ কোটি টাকা পাচারের একটি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামি আব্দুল মান্নান তালুকদার আদালতের এজলাস থেকে নেমে বাইরে বের হলে তার আইনজীবীরা তাকে ঘিরে দোতলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত এগিয়ে দেন। পরে মান্নান তালুকদারের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তাকে জেলা কারাগারের ফটকে পৌঁছে দেওয়া হয়।
২০১০ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল মান্নান তালুকদার স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি জমি কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান করা হয় বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরপাড় জামে মসজিদের ঈমাম আনিসুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তিকে। এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর তিনি গ্রাহকদের প্রতি লাখে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রলোভন দেখান। তিনি বাগেরহাট ও খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার অন্তত ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ২৯৯ কোটি টাকা আমানত গ্রহণ করেন, যা ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থী। গত কয়েক বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি অ্যাকাউন্টে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯১৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া এই বিপুল পরিমাণ টাকা তিনি ব্যাংক থেকে তুলে পাচার করেছেন। এই টাকা কোথায় পাঁচার করা হয়েছে, তা জানতে দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছে।