সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিন চাষি। তারা তিন জনই নগরঘাটা ইউনিয়নের। তাদের দাবি, বারোমাসি জাতের এই তরমুজ চাষ করে তারা সফল। কম খরচে বেশি ফলন ও বাজারে চাহিদা থাকায় অন্যরাও আগ্রহী হচ্ছেন।
আলিপুর গ্রামের চাষি রেজাউল মোল্লা এ বছর ২০ শতক জমিতে ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। খায়রুল ইসলাম ১০ শতক ও আনারুল ইসলাম চাষ করেছেন ৫ শতক জমিতে।
রেজাউল মোল্লা বলেন, ‘এই অঞ্চলে মৌসুমী তরমুজ চাষ হয় না বললেই চলে। এ জাতটির সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম না। এ জাতের তরমুজ চাষে প্রচুর লাভ। চাষের মেয়াদকাল ৫৫-৬৫ দিন। দুই মাসে এর গড় ওজন আড়াই থেকে তিন কেজি হয়ে থাকে। এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে ২০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। খরচ হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। ১০ শতক জমির তরমুজ ২০ হাজার টাকায় বিক্রিও করেছি। এখান থেকে আরও ২০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি হবে। বেবি তরমুজ চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক একেবারে লাগে না বললেই চলে। এটাকে কীটনাশকমুক্ত ফল বলা যেতে পারে।’
রেজাউল মোল্লা আরও বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে বিভিন্ন ফল ও শাক-সবজি চাষ করি জেনে বেসরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন প্রচেষ্টার’ নয়ন হোসেন সার-বীজসহ সব ধরনের সহায়তা করেন। দেড় মাসের মাথায় ফল আসা শুরু করে। এটা বিক্রি করতে বাজারেও যেতে হয়নি। ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসে নিয়ে গেছেন।’’
আনারুল ইসলাম বলেন, ‘এটা প্রথমে আমরা চাষ করতে চাইনি। কিন্তু, ভালোই ফলন পেয়েছি। সামনের বছর এই জমিতে আরও বেশি সফলতা পাবো। কম খরচ করে অনেক টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করবো। বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এই চাষ করলেও কোনও সরকারি কৃষি কর্মকর্তারা কোনও দিন দেখতে আসেননি। কৃষি বিভাগ থেকে কোনও ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি।’
বেসরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন প্রচেষ্টা’র কৃষি কর্মকর্তা মো. নয়ন হোসেন বলেন, ‘পিকেএসএফ ও উন্নয়ন প্রচেষ্টার সহায়তায় তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের তিন জন চাষি দেড়বিঘা জমিতে এ বছর প্রথম ‘ব্ল্যাক বেবি’ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এটা খুবই লাভজনক চাষ। বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা লাভ করা সম্ভব। এই তরমুজটি বারোমাসি ও অমৌসুমী তরমুজ। তরমুজ মৌসুম শেষ হওয়ার পর এপ্রিল থেকে মে মাসে চারা রোপণ করতে হয়। রোপণের ৬০ দিনের মধ্যে তরমুজটি মাঠ থেকে উত্তোলন করা যায়। এই তরমুজটি খুবই সু-স্বাদু। প্রথম দিকে বিক্রিতে সমস্যা হলেও পরবর্তীতে পাইকাররা কৃষকদের বাড়িতে এসে প্রতিমণ ১২শ টাকা থেকে ১৩শ টাকা দরে কিনে নিয়ে গেছেন।’
নতুন চাষিদের উদ্দেশে নয়ন হোসেন পরামর্শ, ‘বেবি তরমুজ চাষের জন্য সূর্যের আলো পড়ে ও ২০ মিনিটের বেশি সময় পানি জমে থাকে না, এমন জমি বাছাই করতে হবে। এঁটেল এবং দোঁআশ মাটি হতে হবে। এর জীবনকাল ৫৫ থেকে ৬৫ দিন। ফলন গড় ওজন আড়াই কেজি। এটির কয়েকটি জাত আছে। এরমধ্যে ব্ল্যাক বেবি, ইউলো ক্রাইন্ড অন্যতম।’
সাতক্ষীরা তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘নগরঘাটা ইউনিয়নের তরমুজ চাষের বিষয়টি শুনেছি। তবে, কখনও যাওয়া হয়নি। সে কারণে কোনও মন্তব্য করতে পারছি না।’
‘উন্নয়ন প্রচেষ্টা’র কৃষি কর্মকর্তা মো. নয়ন হোসেন জানান, এই তরমুজের জাতটি ভারতের। বাংলাদেশে প্রথম চুয়াডাঙ্গায় এর চাষ হয়। এরপর জয়পুরহাট, মেহেরপুর ও ঢাকার ধামরাইয়ের চাষিরাও এই তরমুজ চাষ করেন। এটি আগে থেকেই ‘ব্ল্যাক বেবি’ নামে পরিচিত।
এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক অরবিন্দু বিশ্বাস কিছু জানেন না বলে জানান।