X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

হাসপাতাল বানাতে চান প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসা যুক্তরাষ্ট্রের ইঞ্জিনিয়ার

তৌহিদ জামান, যশোর
০৪ আগস্ট ২০২২, ১৭:৪৫আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২২, ১৮:০১

একযুগ আগে যশোরের রহিমা খাতুনকে ভালোবেসে বিয়ে করেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস হোগল ওরফে মো. আইয়ুব আলী। সেই থেকে একসঙ্গে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অতিবাহিত করতে কেশবপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা মেহেরপুরে নির্মাণ করেছেন একটি ভবন। ২০ তলা ফাউন্ডেশনের চারতলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করেছেন। ভবনটিকে এখন ‘রহিমা-হোগল উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন হসপিটাল’ করতে চাচ্ছেন এ দম্পতি।

ইতোমধ্যে হাসপাতাল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন বলে জানান ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস হোগল ওরফে আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, ‌‘হাসপাতাল তৈরির অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা দিয়েছি। আবেদন অনুমোদন হলে আগামী এক বছরের মধ্যে কাজ শুরু করবো।’

হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগের বিষয়ে ক্রিস হোগল বলেন, ‘দীর্ঘদিন এখানে বসবাসের মধ্য দিয়ে জানতে পারলাম, এই এলাকাসহ আশপাশের নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা পেতে বেগ পেতে হয়। মূলত তখনই হাসপাতাল তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। সেই চিন্তা থেকে রহিমার পৈতৃকভিটার দুই বিঘার বেশি জমিতে ভবন নির্মাণ শুরু করি। চারতলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করেছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু করবো। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, বেঙ্গালুরু ও বাংলাদেশের কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে হাসপাতাল তৈরি করে যশোর কিংবা ঢাকায় সেটেলড হবো আমরা।’

রহিমা খাতুনের সঙ্গে ক্রিস হোগল ওরফে মো. আইয়ুব আলী

আরও পড়ুন: ফেসবুকে প্রেমের পর লক্ষ্মীপুরের যুবকের সঙ্গে ঘর বাঁধলেন মার্কিন নারী

হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে রহিমা খাতুন বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম ভবনটিতে আমরা বসবাস করবো। সে কারণে প্রচুর টাকা খরচ করে ভবনটি নির্মাণ করি। কিন্তু পরে গ্রাম ও আশপাশের মানুষের চিকিৎসাসেবার কথা ভেবে হাসপাতাল বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের ভালো উদ্যোগ। প্রত্যন্ত গ্রামে হাসপাতাল নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসার জন্য শহরে যেতে হবে না।’

একজন ভিনদেশি নাগরিক, যার ভাষা ও সংস্কৃতি ভিন্ন, দীর্ঘদিন তার সঙ্গে অজপাড়াগাঁয়ে রয়েছেন, বিষয়টি দুজনে কীভাবে মানিয়ে নিয়েছেন জানতে চাইলে রহিমা খাতুন বলেন, ‘হোগল উচ্চশিক্ষিত মানুষ। তার মধ্যে কোনও অহংকার নেই। একজন চাষির মতোই মাঠে কাজ করেন। শাকসবজি চাষাবাদ, কৃষিকাজ ও গরু-ছাগল লালনপালন থেকে শুরু করে সবকিছুই নিজ হাতে করেন। কোনও কাজেই অস্বস্তিবোধ করেন না। বলতে পারেন আমাদের জীবনযাত্রা, ভাষা ও সংস্কৃতি এবং পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে স্বাভাবিকভাবেই মানিয়ে নিয়েছেন হোগল।’

নিজেদের জীবনযাপন, সন্তানদের লালনপালন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে রহিমা-হোগল দম্পতির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিনিধির। অসম্পূর্ণ ভবনের নিচতলায় প্রতিনিধি বসলে কাজ শেষ করে নিজ হাতে কফি বানিয়ে নিয়ে আসেন হোগল। দীর্ঘ আলাপচারিতায় বারবারই বলার চেষ্টা করেছেন, গ্রামের মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য কিছু করতে পারলেই সার্থক হবে তার ভালোবাসা।

২০ তলা ফাউন্ডেশনের বাড়ির চারতলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করেছেন এ দম্পতি

আরও পড়ুন: প্রেমের টানে খুলনায় জার্মান নারী

সরেজমিন দেখা যায়, ভবনটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রধান গেট সুরক্ষিত। ভবনের পেছনে আরেকটি গেট রয়েছে। ভবনের পাশে গরু-ছাগলের খামার। সেখানে পাঁচটি গরু ও ১৫টি ছাগল রয়েছে। হোগল ভালোবেসে তিনটি কুকুর লালনপালন করছেন, সেগুলো চীন থেকে এনেছেন। 

ভবনের পাশেই সবজি ক্ষেত ও ফুলের বাগান। এক পাশে গড়েছেন মাজার। যেখানে শায়িত আছেন রহিমার বাবা আবুল খাঁ। নান্দনিকভাবে তৈরি করা মাজারের চারপাশে সারিবদ্ধভাবে লাগানো রয়েছে ফুল গাছ।

রহিমা খাতুন বলেন, ‘আমরা এখানে সাড়ে তিন বিঘা ফসলি জমি কিনেছি। জমি থেকে যে ধান হয়, তাতে সংসার চলে। চাল কেনা লাগে না। শাকসবজি নিজেরাই চাষ করি।’

ক্রিস হোগলের বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে, পেশায় পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার। ভারতের মুম্বাই শহরে থাকতেন। অনিল আম্বানির রিলায়েন্স ন্যাচারাল রিসোর্সেস লিমিটেড কোম্পানিতে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করতেন। হঠাৎ মুম্বাই শহরে একদিন রহিমার সঙ্গে দেখা হয় তার।

নিজের জীবনের স্মৃতিচারণ করে রহিমা খাতুন বলেন, ‌‘শৈশবে আমার বাবা আবুল খাঁ ও মা নেছারুন নেছার হাত ধরে ভারতে যাই। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। বাবা শ্রমিকের কাজ করতেন। বারাসাতের বস্তিতে থাকতাম। ১৪ বছর বয়সে বাবা আমাকে বিয়ে দেন। জমিও কিনেছিলাম সেখানে। তিন সন্তানের মা হই। কিন্তু সংসারে অভাব দেখা দেওয়ায় স্বামী জমি বিক্রি করে দেন। আমাকে একা ফেলে স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে যান। জীবিকার সন্ধানে মুম্বাই শহরে চলে যাই। আশ্রয় নিই এক আত্মীয়ের বাসায়। সেখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এরই মধ্যে বাবা-মা কেশবপুরে চলে আসেন।’

এই দম্পতি ভবনের পাশে গরু-ছাগলের খামার গড়েছেন

আরও পড়ুন: প্রেমের টানে বরিশাল এসে মার খেলেন ভারতীয় যুবক

‘২০০৯ সালের শেষের দিকে হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় মুম্বাই শহরের রাস্তায় হোগলের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেদিন আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন হোগল। হিন্দিতে দু’একটি কথা বলার চেষ্টা করেছি। সেখান থেকে তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। এরপর আবার দেখা হয়। তখন বিয়ের কথা বলেন হোগল। পরিচয়ের ছয় মাস পর ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল মাসে বিয়ে করি আমরা। দেনমোহর ধরা হয় ৭৮৬ ডলার’, বলছিলেন রহিমা খাতুন। 

তিনি বলেন, ‘বিয়ের তিন বছর পর কর্মসূত্রে হোগল আমাকে নিয়ে চীনে যান। সেখানে পাঁচ বছর ছিলাম। এরপর কেশবপুরে বাবার বাড়িতে ফিরে আসি। এখানে ফিরে আসার পর বাবা মারা যান। বাড়ির ভেতরে তাকে কবর দেওয়া হয়। মা এখনও জীবিত। প্রথম স্বামীর তিন সন্তান আমাদের সঙ্গেই থাকে। আর কোনও সন্তান নেই। আমরা সুখে আছি, ভালো আছি।’ 

/এএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
টিকটকে পরিচয় তারপর বিয়ে: স্বামীর খোঁজে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নববধূ
নারীর সঙ্গে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় যুবলীগ নেতা, কাজি ডেকে পড়ানো হলো বিয়ে
বিয়ের কথা বলে ফেনীতে এনে বিদেশি নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেফতার ১
সর্বশেষ খবর
লঞ্চে তরুণীদের মারধরের ঘটনায় মামলা, আসামি সেই যুবকসহ ২৫ জন
লঞ্চে তরুণীদের মারধরের ঘটনায় মামলা, আসামি সেই যুবকসহ ২৫ জন
কয়েক মাস আগেই আ.লীগের বিচারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি: সালাউদ্দিন
কয়েক মাস আগেই আ.লীগের বিচারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি: সালাউদ্দিন
এপ্রিলে সড়কে ৫৮৮ জনের প্রাণহানি, আহত ১১২৪
এপ্রিলে সড়কে ৫৮৮ জনের প্রাণহানি, আহত ১১২৪
নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে অনেক সময় লাগবে: আসিফ নজরুল
নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে অনেক সময় লাগবে: আসিফ নজরুল
সর্বাধিক পঠিত
জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ