X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরের জনসভায় যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

যশোর প্রতিনিধি
২৪ নভেম্বর ২০২২, ১৮:০৯আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২২, ২০:৪২

যশোর শহরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) জনসভা করেছে আওয়ামী লীগ। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে আধঘণ্টার বেশ সময় বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

আপনারা এসেছেন এবং আমাকে আপনাদের সামনে দু’কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন আমি কৃতজ্ঞ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আপনারা এখানে নৌকার সব প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন এ জন্য আপনাদের প্রতি জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে যে সংগ্রাম তিনি শুরু করেছিলেন, সেই সংগ্রামে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় এনেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথের বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে, সেই সময় এলো চরম আঘাত, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, সেদিন আমার মা, ভাই কামাল, জামাল, রাসেলসহ আমাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। আমি আজকের দিনে তাদের জন্য দোয়া চাই। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। সব হারানোর বেদনা নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছিলাম, বাংলার মানুষের ভাগ্য গড়তে। 

পঁচাত্তরের পর একের পর এক ক্যু হয়েছে আর সারা রাত কারফিউ। এই তো ছিল তখনকার অবস্থা। জিয়া-মোশতাক এরা সবাই খুনি। বিচার চাওয়ার অধিকার আমার ছিল না। বাবা-মা হারিয়েছি মামলা করতে পারবো না। তারপরও সবকিছু মাথায় নিয়ে ফিরে এসেছি বাংলার জনগণের কাছে। একটা কারণেই এসেছি, এই জাতির জন্য আমার বাবা সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, একটাই লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আপনারা ভোট দিয়েছেন, সেই ভোটে নির্বাচিত হয়ে বারবার ক্ষমতায় এসেছি। আর ক্ষমতায় এসেছি বলেই দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে।

যশোরের জনসভায় জনসমুদ্র

যে বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করা হয়েছিল, বিদেশ থেকে পুরোনো কাপড় এনে দেশের মানুষকে পরানো হতো। মানুষের পেটে খাবার ছিল না। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করি। যেখানে এখন ৩০ ধরনের ওষুধ বিনে পয়সায় পাওয়া যায়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক মানুষের। সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। আওয়ামী লীগ সরকারই এটা আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছে।

আর বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে কী দিয়েছে? এই যশোরে শামসুর রহমান ও মুকুলকে হত্যা করা হয়েছে। খুলনায় মঞ্জুরুল ইমাম, মানিক সাহাকে হত্যা করা হয়েছে। শুধু রক্ত আর হত্যা ছাড়া বিএনপি দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। নিজেরা লুটপাট ও অর্থপাচার করেছে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। জিয়া যখন মারা যায়, বললো কিছুই রেখে যায়নি একটা ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া। আর পরে সেই সুটকেস হয়ে গেলো জাদুর বাক্স। যা দিয়ে কোকো-তারেক হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। যে টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আর বিদেশে পাচার করেছে বলেই তারা শাস্তি পেয়েছে।

আজকে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার করায় মানি লন্ডারিং মামলায় সাত বছরের জেল ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে তারেক জিয়া। সেখানেও তার সাজা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকেসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করতে চেয়েছিল। বারবার এমন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। সেই মামলায় তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আর খালেদা জিয়া শুধু জনগণের অর্থ মারেনি, এতিমের টাকাও মেরে দিয়েছে। সেই টাকা মেরে সেও আজ সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আর যে দলের নেতা সাজাপ্রাপ্ত আসামি সেই দল জনগণকে কী দিতে পারবে বলেন। তারা কিছুই দিতে পারে না, তারা শুধু মানুষের রক্ত চুষে খেতে পারে। এটাই বাস্তবতা।

যশোরের জনসভায় যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। দেশের রাস্তাঘাট, পুল সবই করছি। এই যশোর সবসময়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। মুক্তিযুদ্ধে এই জেলার অবদান অনেক বেশি। বিএনপি এই জেলার কোনও উন্নয়ন করেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যশোরের উন্নয়ন করেছি। আমি কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি, খালেদা জিয়া ২০০১-এ ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি আবার চালু করেছি, যাতে মানুষ বিনে পয়সায় ওষুধ পায়।

করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মন্দা। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমি দেখেছি, কেউ কেউ রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। আমাদের রিজার্ভে কোনও সমস্যা নাই। অনেকে বলে, ব্যাংকে টাকা নাই তাই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেলে। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে রাখলে তো চোরে নিয়ে যাবে। এটা তো চোরের জন্য সুযোগ করে দেওয়া। কিন্তু ব্যাংকে টাকা নাই কথাটা মিথ্যা। গতকালও আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ অন্যদের সঙ্গে মিটিং করেছি, আমাদের এই বিষয়ে কোনও সমস্যা নাই। প্রত্যেকটা ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা আছে। আমাদের রেমিট্যান্স ও বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসছে। রফতানি আয় ও ট্যাক্স কালেকশন বেড়েছে। বিশ্বের অন্য দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, বাংলাদেশ এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী আছে।

আজকে আমরা ধান উৎপাদনে সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছি। আমরা তরিতরকারি সবজি উৎপাদন করছি। এই যশোর সবসময় একদিকে যেমন খেজুর গুড়ের দেশ, আবার ফুল উৎপাদনেও এক নম্বরে রয়েছে। আমরা কৃষকদের সব রকম সুযোগ করে দিচ্ছি। ১০ টাকায় তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। দুই কোটি কৃষক এর থেকে সুবিধা পায়। কৃষকের এক কোটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ৯০ টাকায় সার কিনে মাত্র ২২ টাকায় কৃষককে দিচ্ছি। কৃষকের যাতে অসুবিধা না হয় এর ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি।

দুরবিন দিয়ে জনসমুদ্র দেখেন শেখ হাসিনা

নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। সাবমেরিন ক্যাবল এবং ব্রডব্যান্ড ইউনিয়নে পৌঁছে গেছে। এই যশোর থেকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করেছিলাম। এই যশোরে নির্মিত হয়েছে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি পার্ক। যেখানে প্রায় দেড় দুই হাজার ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে বিদেশ থেকে অনেক বিনিয়োগ আসছে। আমরা এখানে বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা করেছি। সব উন্নয়নে কাজ করেছি। সব প্রাইমারি স্কুলে নতুন ভবন করেছি। প্রত্যেক উপজেলায় সরকারি কলেজ করেছি। বিএনপির আমলে সাক্ষরতা হার ছিল ৪৫ শতাংশ, আজকে তা ৭৫ শতাংশে উঠ গেছে। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। দুই কোটি ২০ লাখ ছেলেমেয়েকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিচ্ছি। বাবা-মার খরচ কমানোর জন্য আমরা সহযোগিতা করছি।

বেনাপোলকে আমরা উন্নত করে অটোমেশন করে দিয়েছি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাতে সেখানে মাল আসা-যাওয়া করতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। আমরা করেছি মধুমতি সেতু। যশোর ও নড়াইলের যোগাযোগের জন্য ৯৬ সালেই রাস্তা করে দিয়েছি। প্রত্যেক এলাকায় আমরা আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলছি। পদ্মা সেতু হওয়ায় আপনারা কত সহজে যাতায়াত করতে পারেন। দ্রুত ঢাকা চলে যেতে পারেন। এখানে উৎপাদিত সব পণ্য দ্রুত ঢাকা চলে যেতে পারে। যশোর এয়ারপোর্ট আরও উন্নত করে দেওয়া হচ্ছে। যশোর থেকে শুধু ঢাকা নয়, কক্সবাজারের রুটও আমরা চালু করেছি। পদ্মা সেতু হওয়ায় এখানে যোগাযোগ বেড়েছে। ঢাকা থেকে মাল এখন আর চট্টগ্রাম যেতে চায় না, মোংলা বন্দরে যেতে চায়। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া মোংলা বন্ধ করে দিয়েছিল, আমরা এসে চালু করেছি। রামপালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। সেটি হলে এখানে আর কোনও কষ্ট থাকবে না। খুলনায় প্রথম বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছি, যার সুবিধা যশোরবাসীও পেয়েছে। অভয়নগরে আমরা একটা ইপিজেড করে দিচ্ছি। সেখানে ৪০০টি শিল্প প্লট হবে। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

জনসভায় এমপি কাজী নাবিল আহমেদের সমর্থকরা

আমরা যুব সমাজের অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছি। শুধু লেখাপড়া করে কাজের পেছনে ছোটা না, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। নিজে কাজ করতে হবে। কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি, যেই ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পাওয়া যায়। এককভাবে যৌথভাবে এই ঋণ নেওয়া যাবে। ইয়াং বাংলাকে আইটি বিষয়ে ট্রেনিং দিচ্ছি। ফ্রিল্যান্সারদের জন্যও রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এই যুগে কেউ বেকার থাকতে পারবে না, কিছু না কিছু করতে হবে। সে সুযোগটা আমরা করে দিয়েছি।

পদ্মা সেতু থেকে যাতে সরাসরি যশোরে আসতে পারে সে রেললাইনের কাজও চলছে। একদম ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে সোজা যশোরে চলে আসবে। এই রেললাইনের অ্যানলাইনমেন্ট অন্যদিকে ছিল, আমি এটা যশোরের সঙ্গে যুক্ত করেছি। ২০১০ সালে যশোরে একটি মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ৫০০ শয্যার এই মেডিক্যাল কলেজের কাজ বর্তমানে চলমান আছে। আপনাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। প্রত্যেক উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যার ছিল, আমরা তার ৫০-এ উন্নীত করেছি। চৌগাছা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ১০০ বেডের করা হয়েছে। আমরা হিসাব নিয়েছি কোথায় কত রোগী আসে, সেই হিসাবেই আমরা সিট বাড়িয়েছি। এখানে প্রায় ২৭৫টি কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক, ২৭৫ জন হেলথকেয়ার প্রোভাইডারের কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কোনও ধনী দেশ বিনা পয়সায় করোনার ভ্যাকসিন দেয়নি। সব দেশে টাকা দিয়ে টিকা নিতে হয়েছে। আমি টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনে বিনা পয়সায় আপনাদের দিয়েছি। এই করোনা মোকাবিলার জন্য স্পেশাল প্লেন পাঠিয়ে সিরিঞ্জ, ভ্যাকসিন যা যা দরকার আমরা তার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছি। অনেকে আমাদের রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে, রিজার্ভ কোথায় গেলো। রিজার্ভ কোথাও যায়নি। যেহেতু যুদ্ধ লেগেছে, যে গম ২০০ ডলারে আনতাম তা এখন ৬০০ ডলার। তারপরও আমরা কিনে আনছি, দেশের মানুষের জন্য। গম, ভুট্টা, সার সবকিছুর দাম বেড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। পরিবহন খরচ বেড়েছে। তাও আনছি, যাতে আমার দেশে খাদ্যের ঘাটতি না হয়।

সে জন্য দেশের মানুষকে আহ্বান করেছি, এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। প্রত্যেকটা জমি আবাদ করতে হবে, যাতে খাদ্যের ঘাটতি না থাকে, যাতে কারও কাছে হাত পাততে না হয়। যার যেখানে যা আছে উৎপাদন করেন। একটা মরিচ, টমেটো, লাউ, শিম গাছ লাগান। যা পারেন কিছু উৎপাদন করেন।

যশোরের জনসভায় যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বাংলাদেশের একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তিনি নোয়াখালীর চর এলাকা দিয়ে গুচ্ছগ্রাম শুরু করেছিলেন। তিনি কাজ সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। আমি ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একটা মানুষও কুঁড়েঘরে বাস করবে না। টিনের একটা ঘর দিলেও দেবো। আমরা ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করে টিনের ঘর দিয়েছি। এবার আমরা সব এলাকায় তালিকা করে বিনা পয়সায় ভূমিহীনদের ঘর দিয়েছি। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এই ঘর পেয়েছে। এই বাংলাদেশে কোনও মানুষ ঠিকানাবিহীন ও ভূমিহীন থাকবে না।

এই বাংলাদেশকে খালেদা জিয়া সরকার যেভাবে রেখে গিয়েছিল, তখন প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করতো। আমরা ২০ ভাগে নামিয়েছি। হতদরিদ্র ছিল ২৫ ভাগ, আমরা সেটা ১০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। কেন? আমরা মানুষের কথা চিন্তা করেছি। করোনার সময় আমরা সব ধরনের মানুষকে সহায়তা করেছি। এমনকি যেসব স্কুল এমপিওভুক্ত না সেসব স্কুলের শিক্ষকদের জন্যও টাকা পাঠিয়েছি। ইমাম-মোয়াজ্জিন থেকে শুরু করে যন্ত্রশিল্পীদের জন্যও টাকা পাঠিয়েছি। গ্রামে গ্রামে টাকা পাঠিয়েছি। মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করি।

যশোরের জলাবদ্ধতা দূর করতে আমরা নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। ৮২ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা পুনরুদ্ধারের জন্য এবং নৌযান যাতে চলাচল করে সেই কাজ হাতে নিয়েছি। এখানে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স করে দিয়েছি। আসলে এত কাজ করেছি, বলতে বলতে ভুলে গেছি।

এই যশোরে আমার নাড়ির টান আছে। আমার নানা শেখ জহুরুল হক যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর, তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল, যার কারণে লাশ টুঙ্গিপাড়ায় নেওয়া যায়নি। তাই আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে দারিদ্র্য বিমোচনে এখানে শেখ জহিরুল হক পল্লি উন্নয়ন অ্যাকাডেমি নামে ট্রেনিং সেন্টার করা হবে। এর জন্য ৫০ একর জমি নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এখানে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে।

যশোরের জনসভায় যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

গত ১৪ বছরে আমরা ৯ হাজার ৩১৮ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক করে দিয়েছি। যার মধ্যে চার হাজার ৩৯৩ কিলোমিটার পাকা সড়ক। দুই হাজার ৫৫৮ কিলোমিটার ব্রিজ করেছি। একটা সরকারের পক্ষে যা সম্ভব আমরা তা করে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে, এই অঞ্চলটা আরও উন্নত হোক।

গুজবে কখনও কান দেবেন না। বিএনপির কাজই হলো গুঞ্জন ছড়ানো। ওরা তো নিজেরা কিছু করতে পারে না। ক্ষমতায় যখনই এসেছে লুটপাট করে খেয়েছে। ১৯৯৬ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি, বিএনপি সরকার রিজার্ভ রেখে গিয়েছিল ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০০৯ সালে যখন সরকারে এলাম তখন রিজার্ভ পাঁচ বিলিয়ন ছিল। করোনার সময়ে আমাদের আমদানি-রফতানি ছিল না, সে জন্য আমাদের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন হয়েছিল। এরপর যা কেনা দরকার আমরা জনগণের জন্য দুই হাতে খরচ করেছি। রিজার্ভ অন্য কোথাও যায়নি, এটা জনগণের কল্যাণে ব্যয় হয়েছে। আট বিলিয়ন আমরা বিভিন্ন কাজের বিনিয়োগ করছি। রফতানি, কৃষিতে প্রণোদনা দিচ্ছি।

আমি জানি, যশোর স্টেডিয়াম জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় আছে। এই স্টেডিয়ামের সার্বিক উন্নয়নে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা এটির উন্নয়ন করবো। খেলাধুলা আমরা চাই। প্রত্যেকটি উপজেলায় আমরা মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছি। আমাদের মাথাপিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। খালেদা জিয়ার সময় ছিল মাত্র ৩৫৩ মার্কিন ডলার। এরা (বিএনপি) কার কাছে প্রশ্ন করে? খুন, হত্যা, জেল, জুলুম, মামলা ছাড়া তারা কিছুই দিতে পারেনি।

এটুকুই বলবো, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদেরকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন ভোট দেবেন কিনা। আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

/এফআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি এবং ৫টি সমঝোতা স্মারক সই
ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা
সর্বশেষ খবর
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
খারকিভে আবাসিক ভবনে রুশ হামলায় আহত ৬
খারকিভে আবাসিক ভবনে রুশ হামলায় আহত ৬
গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে মানতে হবে এই ৮ টিপস
গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে মানতে হবে এই ৮ টিপস
দুর্নীতি মামলায় এসকে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন
দুর্নীতি মামলায় এসকে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা