দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল ‘ডেভিল ব্রেথ’ অর্থাৎ শয়তানের নিঃশ্বাস চক্রটি। যশোরে এক মুদি দোকানির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে তার মুখের সামনে টাকা ধরে ছয় লাখ টাকা নিয়ে গেছে চক্রের সদস্যরা।
অবশেষে চক্রের সদস্য তিন ইরানি নাগরিকসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে।
রবিবার রাতে শহরের হাটখোলা রোড ও ঢাকার ভাটারা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সোমবার (০৮ মে) বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো—ইরানের রাজধানী তেহরানের খরাজ গহরদস্ত এলাকার নাদের মাহবুবীর ছেলে খালেদ মাহবুবী (৫৪), তার ছেলে সালার মাহবুবী (১৮), বোলভার আজাদী এলাকার লতিফ মাসুফির ছেলে ফারিবোর মাসুফি (৫৭), গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘ্যানাসুর গ্রামের সারোয়ার শেখের ছেলে খোরশেদ আলম (৫৩) ও বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম ডুমুরিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে সাইদুল ইসলাম বাবু (৩৫)।
চক্রটির প্রতারণার ধরনের বর্ণনা দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, ‘অভয়নগর উপজেলার বর্ণী হরিশপুর বাজারে মরিয়ম স্টোর নামে মুদি দোকান রয়েছে শরিফুল ইসলামের। দোকানে মোবাইল ব্যাংকিং ও রিচার্জের ব্যবসা করেন। গত ৮ এপ্রিল দোকানের সামনে প্রাইভেটকার থামিয়ে অজ্ঞাত তিন-চার ব্যক্তি নামে। তাদের মধ্যে দুই জন দোকানে প্রবেশ করে। একজনের মাথায় টুপি, মুখে মাস্ক আরেকজন প্যান্ট-শার্ট পরিহিত ছিল। দোকানে ঢুকে দুই জনই আরবি ভাষায় কথা বলে। এর মধ্যে একজন নারিকেল তেল কেনার কথা বলে শরিফুলের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে। পরে মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে মুখের সামনে ধরে। এতে শরিফুল অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং লোকগুলোর কথামতো কাজ করতে থাকেন। এরপর ওই দুই ব্যক্তি দোকান থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় শরিফুলের ছেলে বাদী হয়ে গত ৫ মে অভয়নগর থানায় মামলা করেন।’
তদন্তে নেমে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরায় ফুটেজ সংগ্রহ করে ডিবি উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তা বেলাল হোসাইন বলেন, ‘প্রাইভেটকারের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সূত্র ধরে জড়িতদের নাম-ঠিকানা বের করা হয়। রবিবার রাতে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে খোরশেদ আলম ও সাইদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, যশোরের হাটখোলা রোডের সিটি প্লাজা এলাকা থেকে এইক রাতে ইরানি নাগরিক খালেদ মাহবুবী, সালার মাহবুবী ও ফারিবোর মাসুফিকে গ্রেফতার করা হয়।’
গ্রেফতারকৃতরা ডেভিল ব্রেথ অর্থাৎ শয়তানের নিঃশ্বাস প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য জানিয়ে বেলাল হোসাইন বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, চার হাজার ৩৫৯ ডলার, ৩২৫ ভারতীয় রুপি, ১৮ লাখ ৮০ হাজার ইরানি রিয়াল, এক হাজার ইরাকি দিনার, ১৮৫ নেপালি রুপি, এক হাজার ভিয়েতনামি মুদ্রা ও ৫৪ হাজার ৭০০ টাকা, তিনটি পাসপোর্ট এবং সাতটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা, যশোর ও খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতারণা করে আসছিল তারা।’