X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে কলেরার প্রাদুর্ভাব, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ

তৌহিদ জামান, যশোর
২৩ মে ২০২৩, ০০:০১আপডেট : ২৩ মে ২০২৩, ০০:০১

যশোরে কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন জেলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। গত চার মাস ধরে এ অবস্থা। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করেছেন জেলা সিভিল সার্জন। এ অবস্থায় জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, চার মাস আগে জেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। মার্চ মাসের শুরুর দিকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ অবস্থার কারণ নির্ণয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) শরণাপন্ন হয় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ৩১ মার্চ আইইডিসিআরের টিম যশোরে এসে কারণ অনুসন্ধান শুরু করে। টিমটি দুই সপ্তাহ ধরে রোগী, তাদের স্বজন, রোগী সংশ্লিষ্ট সদর ও চৌগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পানিসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে। তাদের অনুসন্ধানে পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি, ব্যক্তিগতভাবে বসানো সাবমারসিবল পাম্পের পানিতে কলেরার জীবাণু মেলে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তথ্যমতে, বর্তমানে যারা ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের অধিকাংশ কলেরায় আক্রান্ত। প্রতিদিন ৫০-এর অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ইতোমধ্যে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু। তাদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের সংক্রামক ওয়ার্ডের বারান্দায় কথা হয় শহরতলীর ঝুঝুমপুর এলাকার আব্দুর রহমানের সঙ্গে। তার মেয়ে গত তিন দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়ের বারবার পায়খানা হচ্ছিল, সঙ্গে বমি। তবে হাসপাতালে ভর্তির পর এখন বেশ ভালো আছে। চিকিৎসক বলেছেন, আজ অথবা কালকের মধ্যে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবো।’

কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হঠাৎ ডায়রিয়া শুরু হয়। সঙ্গে দফায় দফায় বমি। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হন।

গত চার মাস ধরে হাসপাতালে ডায়রিয়া ও কলেরার রোগী আসছেন বলে জানালেন হাসপাতালের সংক্রামক ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স শারমিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘রোগীদের প্রচুর চাপ। রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। রোগীর সঙ্গে অনেকে আসছেন। তারা সঙ্গে থাকেন, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন। পরে তারাও আক্রান্ত হন। তাদের বুঝিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না।’

চার মাস ধরে আমরা এসব রোগী নিয়ে ভুগছি উল্লেখ করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘প্রথমদিকে শহরের কয়েকটি এলাকার রোগী ছিলেন। এখন বিভিন্ন উপজেলা থেকে রোগী আসছেন।’

হাসপাতালে সংক্রামক রোগীর জন্য ছয়টি বেড আছে জানিয়ে আব্দুস সামাদ বলেন, ‘সোমবার বিকাল পর্যন্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন ৯২ জন। রোগীদের মধ্যে নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছেন।’

সোমবার বিকাল পর্যন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯২ জন ডায়রিয়া রোগী

তিনি বলেন, ‘গত রমজানে আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে কলেরার জীবাণুর কথা উঠে এসেছে। কলেরা রোগীদের যে যে উপসর্গ থাকে, হাসপাতালে যেসব রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন; তাদের অনেকের সেসব উপসর্গ আছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের দেওয়া প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা চলছে।’  

এ অবস্থায় জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. উবায়দুল কাদির উজ্জ্বল। তিনি বলেন, ‘আসলে কী কারণে এই রোগে এতো বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগের শরীরে পানিশূন্যতা রয়েছে। এ কারণে তাদের রেনাল ফেইলুর বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। ধারণা করছি, পানিবাহিত কারণে আক্রান্ত বেশি হচ্ছেন তারা।’

অল্প অসুস্থতায় হাসপাতালে না আসার পরামর্শ দিয়ে ডা. উবায়দুল কাদির বলেন, ‘বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া ভালো হবে। কেননা হাসপাতালে এটি একজনের থেকে অপরজনের মধ্যে ছড়াতে পারে।’ 

খাবার স্যালাইন ও ডাবের পানি বেশি বেশি পানের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে যাদের ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন বা কার্ডিয়াক সমস্যা রয়েছে, তাদের পরিস্থিতি এমন হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হবে।’

জেলায় ডায়রিয়া ও কলেরা রোগীর সর্বশেষ পরিস্থিতির বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘কিছুদিন ধরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগী বাড়ার কারণে আমরা আইইডিসিআরকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছিলাম। তাদের টিম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদের জানিয়েছেন, পানি থেকে এই রোগ ছড়াচ্ছে। তাদের এই রিপোর্টের বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসক ও পৌরসভাকে জানিয়েছি। পৌরসভা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তাদের পাইপ পরীক্ষা শুরু করেছে এবং লিকেজগুলো মেরামত করছে।’

যেহেতু রোগী বাড়ছে সেহেতু আমাদের প্রস্তুতি আছে জানিয়ে ডা. বিপ্লব কান্তি বলেন, ‘আমাদের আওতার বাইরে এখনও যায়নি। ওষুধ, স্যালাইন সবকিছু পর্যাপ্ত আছে। ইতোমধ্যে হাসপাতালে রোগীদের জন্য আমরা একটি ওয়ার্ড খুলেছি।’

/এএম/ 
সম্পর্কিত
গরমে ডায়রিয়া রোগী আরও বাড়ার শঙ্কা
রাতের খাবার খেয়ে অসুস্থ ১৬ মাদ্রাসাশিক্ষার্থী, সকালে হাসপাতালে
অসুস্থ মেয়েকে দেখতে এসে বাবা-মায়ের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা