খুলনার জোড়াগেট কোরবানির হাটে উঠেছে ২৭ মণ ওজনের একটি গরু। এটির দাম হাঁকা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। গরুটি যিনি কিনবেন তাকে ফ্রিতে একটি খাসিও দেওয়া হবে।
গরুর মালিক বাগেরহাটের পাথরখোলার মুরাদ হোসেন বলেন, শাহীওয়াল জাতের গরুটি চার বছর আগে ৮৯ হাজার টাকায় কিনে লালনপালন করি। গত বছর এ হাটে আনা হয়েছিল। তখন পাঁচ লাখ টাকা দাম চেয়েছিলাম। সাড়ে চার লাখ টাকা দাম ওঠে, কিন্তু বিক্রি করিনি। এবার আবারও এ হাটে আনা হল। এবার দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। ওজনও বেড়ে হয়েছে ২৭ মণ।
জোড়াগেট কোরবানির হাট খুলনা সিটি করপোরেশন পরিচালনা করে। গত ২২ জুন থেকে হাটটি শুরু হয়েছে। ২৯ জুন সকাল পর্যন্ত এ হাটে কেনাবেচা চলবে। হাটে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ট্রাক, ট্রলি ও ট্রলারে গরু আসছে। জোড়াগেট মোড় থেকে ৬ নম্বর ঘাট পর্যন্ত হাটের বিস্তার ছড়িয়েছে।
এই হাটের সুপারভাইজার নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, হাটে ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী নিয়োজিত করা হয়েছে। রয়েছে সিসিটিভি। জালনোট শনাক্তে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ব্যাংকের দফতরও খোলা হয়েছে। প্রথম দুই দিনে ১০ হাজার টাকা হাসিল আদায় হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশীয় বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় সব ধরনের গরুর জন্য হাটটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে ধনীরাও হাটটিতে একবার হলেও আসেন।
উল্লেখ্য, কোরবানির পশুর কেনাবেচার জন্য প্রতি বছর নগরীর জোড়াগেট পাইকারি কাঁচা বাজারে পশুর হাট বসায় কেসিসি। আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাট পরিচালনা করতো। ২০০৯ সালে হাট থেকে কেসিসির আয় ছিল ৪৭ লাখ টাকা। ২০১১ সাল থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাট পরিচালনার উদ্যোগ নেয় সিটি কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে এ হাটের মাধ্যমে কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। ২০১১ সালে আয়ের পরিমাণ ছিল এক কোটি ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৭১ টাকা। বিক্রি হয়েছিল আট হাজার ৩৯৬টি পশু। ২০২২ সালে আয় হয়েছিল দুই কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার ৭৪৫ টাকা।
এদিকে, খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় গরুর হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। দাকোপে চালান পৌরসভা সদরে জমে উঠেছে হাট। পশু ক্রয় ও বিক্রয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই। হাটটিতে ক্রেতা ও বিক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। সপ্তাহের অন্য হাটের দিনের তুলনায় গরু ও ছাগলের উপস্থিতি দ্বিগুণের বেশি।
গরু ব্যবসায়ী জয়দেব ও সমীর মণ্ডল বলেন, ১০-২০টি দেশি ষাঁড় হাটে তুলেছি। আসা করছি ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো।
ময়না বেগম তাঁর নিজের পোষা দুটি ছাগলের দাম হেঁকেছেন ১৮ হাজার টাকা। বাড়িতে পালন করা উত্তম সরদার একটি ভেড়ার দাম চাচ্ছেন ১০ হাজার টাকা।
ঈদে কোরবানি গরু কিনতে আসা নুর ইসলাম ও আরাফাত হোসেন বলেন, এবার হাটে প্রচুর ছাগল, ভেড়া ও গরু উঠেছে, কিন্তু দাম অনেক বেশি। এটা ক্রয় করার সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এ হাটের ইজারাদার জাহিদুর রহমান মিল্টন বলেন, গ্রাম অঞ্চলের মাঠে ঘাস খেয়ে বেড়ে ওঠা দেশি ছোট আকারের গরুর চাহিদা বেশি। যেকোনও সাইজের গরু এই হাটে বেশি পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে ব্যাপারীরা এসে আজকের হাটে প্রচুর গরু কিনেছেন। কৃত্রিম মোটাতাজা করা গরু এ হাটে কম ওঠে। তাই এই হাটের গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ অনেক বেশি।