X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চা বেচে সংসার চালান দুবারের ইউপি সদস্য, করেন জনসেবাও

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
২৭ জুন ২০২৩, ১৮:২৫আপডেট : ২৭ জুন ২০২৩, ১৮:২৫

স্বামী-সন্তানসহ তিন জনের পরিবার চালানোর জন্য চা বিক্রি করেন ফরিদা খাতুন। এরই মধ্যে ২০১৭ সালে এলাকাবাসীর অনুরোধে ইউপি সদস্য (মেম্বার) পদে নির্বাচন করেন, জিতেও যান। ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে ২০২২ সালের নির্বাচনেও দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হন। তবে পুরনো পেশা ছাড়েননি। চালিয়ে যাচ্ছেন চা বিক্রি। স্থানীয় জনগণই তার ক্রেতা। ইউপি সদস্য হয়েও সাধারণ জীবনযাপনের প্রশংসা করছেন স্থানীয়রা।

গত ইউপি নির্বাচনে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে দ্বিতীয়বারের মতো জয়লাভ করেন ফরিদা খাতুন। ওই ইউনিয়নের বশোয়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। স্থানীয় বশোয়া বাজারে চায়ের দোকান চালাচ্ছেন।

এলাকার মানুষের অনুরোধে ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করেছি উল্লেখ করে ফরিদা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘প্রতিবার নির্বাচনে এলাকার ভোটাররা প্রচারণা করেছেন। তারাই ভোটের খরচ জুগিয়েছেন। আমার এই আয়ে সংসার চালিয়ে ভোটের প্রচারণা চালানো সম্ভব নয়।’

সরেজমিনে এই ইউপি সদস্যের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, দো-চালা ছোট টিনের ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন। এই বাড়ি ছাড়া আর কোনও সম্পদ নেই। তার এমন সাধারণ জীবনযাপনে মুগ্ধ এলাকাবাসী।

অর্থবিত্তহীন এই নারীর জনপ্রিয়তার কারণ উল্লেখ করে স্থানীয়রা বলছেন, সততা, সময়ে-অসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা ফরিদা খাতুনকে জনগণের আপন করে তুলেছে। এ ছাড়া নিজের বাবার বাড়ির জমি বিক্রি করে গ্রামের রাস্তা বানিয়ে দিয়েও মানুষের আস্থা কুড়িয়েছেন তিনি।

শিমুলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী আলতাফ মোল্লা বলেন, ‘দুইবার মেম্বার নির্বাচিত হলেও এখনও চা বিক্রি করে সৎপথে রোজগার করেন ফরিদা। বিপদে-আপদে সবসময় মানুষের পাশে থাকেন।’

একই এলাকার বাসিন্দা জাকের মোল্লা বলেন, ‘কেউ বিপদে পড়লে রাতের আঁধারে ডাকলেও ফরিদাকে পাওয়া যায়। নিজের টাকা খরচ করে মানুষের পাশে দাঁড়ান। অথচ এর আগে মেম্বারদের পাওয়া যেতো না।’

গ্রামের মানুষই ইউপি সদস্য বানিয়েছে জানিয়ে ফরিদা খাতুন বলেন, ‘আমার জায়গা-জমি নেই। চা বিক্রি করে সংসার চালাই। এজন্য মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনতাম। তখন ভেবেছি, যদি মানুষের সেবা করতে পারতাম। তবে ইচ্ছে থাকলেও সাধ্য ছিল না। একপর্যায়ে গ্রামের মানুষই আমাকে ইউপি সদস্য বানান। তবে আমি আমার এই পেশাও চালিয়ে যাচ্ছি। ইউনিয়ন পরিষদের যে ভাতা পাই, সেটিও মানুষের জন্য ব্যয় করি।’

২০০২ সালে এসএসসি পাস করেছি উল্লেখ করে এই ইউপি সদস্য বলেন, ‘এরপর অভাবের কারণে পড়তে পারিনি। তবে আমার এলাকায় প্রতিটি শিশুর পড়াশোনা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।’

দুই কাজে কীভাবে সমন্বয় করেন জানতে চাইলে ফরিদা খাতুন বলেন, ‘প্রায়দিনই বিভিন্ন সভা থাকে। সেগুলোতে যেতে হয়। দূরে যেতে হলে ভোরে দোকান খুলে কিছু সময় চা বিক্রি করে সেখানে যাই। আবার ফিরে এসে দোকান খুলি। আমার দোকানটা অফিসের মতো। অনেকে এখানেই সমস্যা নিয়ে আসে। চা বিক্রির পাশাপাশি তাদের কাজ করে দিই। একবেলা দোকান না খুললে অনেকে ফিরে যান। তাই নিয়মিত দোকান খুলতে হয়।’

ফরিদা খাতুনের সাধারণ জীবনযাপনের প্রশংসা করে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘ফরিদা একজন দায়িত্ববান জনপ্রতিনিধি। দায়িত্বপালনের পাশাপাশি একটি চায়ের দোকান চালান। আমরা পরিষদ থেকে তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতার চেষ্টা করি।’

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকায় শুরু তিন দিনের কোল্ড চেইন ও অবকাঠামো প্রদর্শনী
ঢাকায় শুরু তিন দিনের কোল্ড চেইন ও অবকাঠামো প্রদর্শনী
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনে সাধারণ মানুষের জীবন বদলে গেছে: সাদ্দাম
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনে সাধারণ মানুষের জীবন বদলে গেছে: সাদ্দাম
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
একসময় চট্টগ্রাম বন্দর যেকোনও দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করবে: খালিদ
একসময় চট্টগ্রাম বন্দর যেকোনও দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করবে: খালিদ
সর্বাধিক পঠিত
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
তালের শাঁস খেলে মিলবে এই ১০ উপকারিতা
তালের শাঁস খেলে মিলবে এই ১০ উপকারিতা
রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন
রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন