মেহেরপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। জেলায় সংক্রমণ ঠেকাতে প্রচারণা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখনও লক্ষ্য করা যায়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও সতর্কতামূলক প্রচারণার পদক্ষেপ নেননি। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতালে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি মাসে গাংনী উপজেলার তিন জনসহ ১৩ জন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তরা সবাই ঢাকাফেরত। প্রতি বছর এই সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। আগাম প্রস্তুতি না নেওয়া এবং প্রচারণা না থাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে কোনও ধরনের প্রচারণা চালানোর উদ্যোদ নেওয়া হয়নি। মশক নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শহর কিংবা গ্রাম; সবখানেই ঝোপ আছে। এসব স্থান মশার প্রজননকেন্দ্র হিসেবে ধরা যায়। পৌর কর্তৃপক্ষ আজও কোনও প্রচারণা চালাচ্ছেন না। তবে পৌর মেয়র দাবি করেছেন, মশক নিধন কার্যক্রম চলছে।
তবে মেহেরপুর ও গাংনী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে মশক নিধনে মাঠে নেমেছে। ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধন ও স্প্রে করার পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ডেঙ্গুর স্বভাব পাল্টেছে। আগে মশা দিনে কামড়াতো। স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়তো। এখন সবখানেই বিচরণ। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে হঠাৎ ১০৩-১০৪ জ্বর দেখা দেয়। জ্বর কমে গেলেও ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রয়ে যায়। শুরু হয় পেটব্যথা, মাথাব্যথা, বমি, মাথা ঘোরা, পাতলা পায়খানা ও শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। ইতোমধ্যে অনেকে জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে রক্ত পরীক্ষা করার। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতনতার কথাও বলা হচ্ছে। মশারি ব্যবহার করারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু হোক আর হেমোরেজিক হোক, এই সময় জ্বর হলেই পরীক্ষা করিয়ে ওষুধ নেওয়া উচিত। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আবারও ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগীর অবস্থা বেশি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই জ্বর হলেই সতর্ক থাকতে হবে।
প্রচারণার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী পৌরসভার মেয়র আহম্মেদ আলী বলেন, ‘প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি আমরা। মশা মারার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে জনবল স্বল্পতার কারণে কাজে গতি কম।’
তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস বলেন, ‘ডেঙ্গু ভয়াবহতা জানার পর তা নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নিচ্ছি।’
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক জমির মোহাম্মদ হাসিবুর সাত্তার বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কীট, আলাদা ওয়ার্ডসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সবখানে প্রচারণা চালানো প্রয়োজন; যাতে সবাই ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক হন। সেক্ষেত্রে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা ও নর্দমায় নোংরা পানি বা জলাবদ্ধতা না থাকে, তার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’
গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ খালেক বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ থেকে সতর্কতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।’