কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ধূমপানের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিতে জিনিয়া খাতুন নামে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (০৮ আগস্ট) আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
এর আগে সোমবার বিকালে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। জিনিয়া খাতুন (১৪) উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ও সুলতানপুর গ্রামের জিল্লুর রহমানের মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ের ছাদে ধূমপান করেছিল কয়েকজন ছাত্রী। এ সময় তাদের কয়েকজন সহপাঠী অফিসের কর্মচারীদের জানায়। কর্মচারীরা বিষয়টি শিক্ষকদের জানান। পরে শিক্ষকরা তাদের ভিডিও ধারণ করে তা অভিভাবকদের দেখানোর হুমকি দেন। এমন হুমকিতে দুই ছাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। স্থানীয়রা তাদের জীবিত উদ্ধার করে। বিকালে বাড়ি ফিরে জিনিয়া গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
জিনিয়ার নানা ও কয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য গাজিরুল ইসলাম জানান, সোমবার জিনিয়া তার কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে বিদ্যালয়ের ছাদে ধূমপান করার সময় শিক্ষার্থীসহ অফিসের কর্মচারীরা দেখে শিক্ষকদের জানায়। পরে শিক্ষকরা তাদের ভিডিও ধারণ করে অবিভাবকদের জানানোর হুমকি দেন। এ ঘটনায় জিনিয়া ও তার আরেক বান্ধবী বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। তাদের দেখে এলাকাবাসী উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। বিকাল ৫টার দিকে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে জিনিয়া। সন্ধ্যায় তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ।’
তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্তের পর মঙ্গলবার তার লাশ এলাকায় নিয়ে এলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। এ সময় সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ বিশ্বাস ঘটনাস্থলে এলে তাকে মারপিট করেন স্থানীয় জনতা।’
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, ছাত্রীদের ধূমপানের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু ও ওলিউর রহমান এবং আয়া শিউলি খাতুন। পরে শিক্ষক কক্ষে তাদের ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। এ সময় টিসি ও অভিভাবকদের বিষয়টি জানানোর হুমকি দিয়ে ব্যাগ কেড়ে নেন শিক্ষকরা। অপমান সইতে না পেরে গলাই ফাঁস দিয়ে জিনিয়া আত্মহত্যা করেছে। আরেক ছাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে রক্ষা পেলেও গুরুতর অসুস্থ। শিক্ষকদের দায়িত্বহীন আচরণের কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
মানববন্ধনে জিনিয়ার মামা জাহিদ হোসেন বলেন, দুই শিক্ষক ও আয়া ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেইল করেছেন। তারা আমার ভাগনিকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছেন। এ ঘটনায় মামলা করবো।
এ বিষয়ে সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের কাছে জিনিয়াসহ তার সহপাঠীদের ধূমপানের বিষয়টি জানার পর অবিভাবকদের মোবাইল নম্বর চাওয়া হয়েছিল। নম্বর না দেওয়ায় তাদের স্কুল ব্যাগ রেখে দেওয়া হয় এবং অবিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে বলা হয়েছিল। পরে জানতে পারি জিনিয়া আত্মহত্যা করেছে। তবে ধূমপানের ভিডিও করা হয়নি।’
কুমারখালী থানার ওসি মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ধূমপান করার বিষয় নিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। এ সময়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঘটনাস্থলে আসলে তাকে মারপিট করা হয়। পুলিশ তাৎক্ষণিক বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী এজাজ কায়সার বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্নজনের বক্তব্য শুনেছি। তবে ভিডিও ধারণের মতো কোনও তথ্য পাইনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’