স্ত্রী হত্যার দায়ে খুলনায় পুলিশ কনস্টেবল লিটন কুমার দেবনাথ ওরফে সাহারিয়ার কবির লিটনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার ১নং ওয়ার্ড পৌরসভার অভিলাষ দেবনাথের ছেলে। রায় ঘোষণার সময়ে তিনি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) খুলনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক কেরামত আলী এ রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলফাজ হোসেন শেখ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২ মার্চ বিকাল পৌনে ৪টার দিকে রূপসা উপজেলার ডোবা গ্রামের জনৈক অশোক অধিকারের বাড়ির পেছন থেকে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের নামে একটি মামলা করেন।
ঘটনা তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা কোচপাড়া এলাকার সামসুল আলমের মেয়ে আরজু আক্তারকে প্রেম নিবেদনসহ বিয়ের প্রস্তাব দেয় পুলিশ সদস্য লিটন কুমার। লিটন কুমার অন্য ধর্মাবলম্বী ও দুই সন্তানের জনক হওয়ায় আরজু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু পুলিশ সদস্য তাকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখান। পরে আরজু আক্তারসহ পরিবারের সদস্যদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন ওই পুলিশ সদস্য। হুমকির পর পুলিশ সদস্যকে বিয়ে করতে রাজি হন।
২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি এফিডেভিট করে লিটন নাম পরিবর্তন করে আরজুকে বিয়ে করে এবং এর মধ্যে তাদের কোলজুড়ে জন্ম নেয় একটি সন্তান। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর বদলি হয়ে তারা উভয় খুলনায় চলে আসে এবং রূপসা উপজেলার পুটিমারী এলাকায় বাড়ি ভাড়া নেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কলহ শুরু হয়। এরপর আরজুকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন। এ ঘটনার পর বাড়ির মালিক লিটন কুমার দেবনাথকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে লিটন একই এলাকার নাদিরা বেগমের বাড়ি ভাড়া নেন। সেখানে কিছুদিন শান্তু থাকার পর পুলিশ সদস্য আবারও স্ত্রীকে মারধর করেন। এ ঘটনার পর আরজু পিতার বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে এবং তাদের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। আরজু ছেড়ে চলে গেলে চাকরির ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে লিটন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে লিটন এবং লাশ ভেসে না ওঠে সেজন্য লোহার পাতসহ লাশ রূপসার আঠারো বেকী নদীতে ফেলে দেন। হত্যার পর অপপ্রচার চালানো হয়, স্ত্রী বাচ্চা রেখে পালিয়ে গেছে। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা বলতে থাকেন, কনস্টেবল স্ত্রীকে হত্যা করেছে। এমনকি এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় পুটিমারী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে সন্দেহ করতে থাকে।
তাছাড়া নদী থেকে লাশ উদ্ধারের ছবি তাকে দেখালে এটি তার স্ত্রী না বলে জানান। লাশের ছবি প্রতিবেশীদের দেখানো হলে তারা শনাক্ত করেন যে এটি আরজু আক্তারের। পরে আদালতের নির্দেশে লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করে পুলিশ নিশ্চিত হয় এটি আরজুর লাশ। আদালতের নির্দেশে পুলিশ সদস্য লিটনকে ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর শিরোমনি আরআই অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা পিবিআইয়ের ওসি লুৎফর রহমান কনস্টেবল লিটন কুমারকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন।