বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না ময়মনসিংহের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা। অনেকে ভাষা শহীদদের নাম পর্যন্ত বলতে পারে না। এ নিয়ে হতাশ ভাষা সৈনিকদের পরিবারের সদস্যরা।
ময়মনসিংহ নগরীর রাধা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তারের কাছে ভাষা শহীদদের নাম জানতে চাইলে সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া বীর শহীদদের নাম বলতে থাকে। তাসলিমা জানায়, স্কুলে শিক্ষকরা ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের সম্পর্কে ধারণা না দেওয়ায় তারা তেমন কিছুই জানে না।
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শান্তা জানায়, একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের দিন তাদের স্কুল বন্ধ থাকে। ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদসহ ভাষা সৈনিকদের সম্পর্কে তেমন কোনও জ্ঞান দেওয়া হয় না বলেই তারা কিছুই জানতে পারেনি।
শুধু রাধা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা না, ময়মনসিংহের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই ভাষা শহীদদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না।
রাধা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে থাকে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেই বিষয়গুলো স্মরণে রাখে না। এ কারণেই তারা ভাষা আন্দোলন এবং ভাষা শহীদ সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে পারে না। তবে এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের এ সম্পর্কে অবশ্যই শেখানো দেওয়া উচিত।’
ময়মনসিংহ শিক্ষক সমিতির সভাপতি চাঁন মিঞা জানান, নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হলে ভাষা আন্দোলন, ভাষা শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। আর এই দায়িত্ব শিক্ষকদেরকেই পালন করতে হবে। শিক্ষকরাই পারে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে।
ভাষা সৈনিক মরহুম এম এ মোস্তফা মতিনের কন্যা সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি মনিরা সুলতানা বলেন, ‘আমরা ভাষা আন্দোলন দেখিনি, কিন্তু ভাষা আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা বাবার কাছে শুনেছি। নতুন প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলন, ভাষা শহীদ এবং ভাষা সৈনিকদের সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা দিতে হবে। আর এই দায়িত্ব পালন করতে হবে শিক্ষক সমাজকেই।’
জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, জেলায় মোট শহীদ মিনার রয়েছে ২৫৪৭টি। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০৪৩টি, স্কুল কলেজ এবং মাদ্রাসায় শহীদ মিনার রয়েছে ৫০৪টি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ১২০৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০৪টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি ৭০০ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে ময়মনসিংহের প্রথম শহীদ মিনার ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় শহরের পৌরসভার পাশে। পরে এই শহীদ মিনারটি স্থানান্তর করে টাউন হল মোড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম শহীদ মিনারের জায়গায় বর্তমানে ভাষা আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের সম্পর্কে জানাতে অবশ্যই শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে।’ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।