X
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
১৩ আষাঢ় ১৪৩২

তাদের ঘরে এলো প্রথম ঈদ, নিজেদের আয়ে কিনলেন পোশাক

আতাউর রহমান জুয়েল, ময়মনসিংহ
২২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০১আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০১

‘মা-বাবা, ভাইবোন থেকেও না থাকার মতো। হিজড়া হয়ে জন্ম নেওয়ায় ছোটবেলায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বাবা-মা। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মা। আমাদের কোনও জায়গাজমি ও ঘরবাড়ি ছিল না। সরকারি জমিতে ঘর করে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এবার রাস্তাঘাটে থাকতে হবে না। উপহারের ঘরে জীবনের প্রথম ঈদ উদযাপন করবো। এই আনন্দের শেষ নেই।’

আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলেছেন ময়মনসিংহ সদরের চরগোবদীয়া আবাসন প্রকল্পে উপহারের ঘর পাওয়া রাশি আক্তার। তিনি বলেন, ‘এখানে ঘর ও জমি পাওয়ার পর শাকসবজি আবাদ করেছি। ঘরের পাশেই মুরগি, কবুতর ও ঘুঘু লালনপালন করছি। এসব থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানোর পর কিছু সঞ্চয় করেছি। সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে এবার ঈদের পোশাক কিনেছি, বাজার সদাই করেছি। এখন আর মানুষের কাছে হাত পাততে হয় না। নিজেই স্বাবলম্বী।’

উপহারের ঘরে জীবনের প্রথম ঈদ উদযাপন করবেন তারা
 
শুধু রাশি নন, এই আবাসন প্রকল্পে ঠাঁই পাওয়া ৩৮ হিজড়া এখন স্বাবলম্বী। একই অনুভূতি সবার। আগে তারা রাস্তাঘাটে মানবেতর জীবনযাপন করতেন। ঈদ বলতে কিছুই ছিল না তাদের। উপহারের ঘর পেয়ে শাকসবজি আবাদ, হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন করে সংসার চালিয়ে সঞ্চয় করছেন। ফলে এবারের ঈদ তাদের কাছে অন্যরকম হিসেবে ধরা দিয়েছে।

উপহারের ঘরে ঠাঁই পেয়েছেন রজনী। ঘরের পাশেই শাকসবজি আবাদ করেছেন। লাগিয়েছেন বিভিন্ন গাছ। করছেন হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন। এখন আর তাকে রাস্তায় গিয়ে টাকা তুলতে হয় না। নিজের আয়ে সংসার চলে। উপহারের ঘরে এবার একসঙ্গে ঈদ করতে পারার আনন্দে কেঁদে ফেলেন রজনী। বলেন, ‘হিজড়া হওয়ার কারণে সমাজ থেকে দূরে সরতে হয়েছে, তেমনি পরিবার থেকেও। বছরের পর বছর রাস্তাঘাটে থাকতে হয়েছিল। ঈদের আনন্দ আমাদের জীবনেও কখনও আসেনি। ঘর ও জমি পাওয়ায় এবার সব হিজড়া একসঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করবো। বলতে গেলে এটি আমাদের জীবনে প্রথম ঈদ। তাই অন্যরকম আয়োজন করেছি।’

আবাসন প্রকল্পে ঠাঁই পাওয়া ৩৮ হিজড়া এখন স্বাবলম্বী

রজনী আরও বলেন, ‘এখানে ঘর পাওয়া প্রত্যেক হিজড়া ঘরের পাশে শাকসবজি আবাদ করছে। কেউ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও কবুতর লালনপালন করে আয় করছে। তা দিয়ে সুন্দরভাবে সংসার চলছে। আবার কমবেশি সবাই কিছু টাকা জমাতে পারছে। এখন আর আমাদের কোনও কষ্ট নেই, শান্তিতে আছি।’ 

একই প্রকল্পের ঘর পাওয়া জুঁই বলেন, ‘আগে ভাড়া বাসায় থাকতাম। ঈদের সময় কাউকে দাওয়াত দিতে পারতাম না। এখন নিজের ঘর আছে। এবার ঈদের আনন্দ একসঙ্গে সব হিজড়া ভাগাভাগি করে নেবো। প্রতিবেশীদের দাওয়াত দেবো।’

রাবেনা বলেন, ‘নিজের আয়ের টাকায় এবার ঈদের পোশাক কিনেছি। কসমেটিকস কিনেছি। ঈদে কোথায় বেড়াতে যাবো, তাও ঠিক করে রেখেছি। উপহারের ঘর আমাদের জীবন বদলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’

 ঘরের পাশেই মুরগি, কবুতর ও ঘুঘু লালনপালন করছেন রাশি আক্তার

হিজড়াদের সংগঠন সেতুবন্ধন কল্যাণ সংঘের সভানেত্রী জয়িতা তনু বলেন, ‘ময়মনসিংহে এখনও অনেক হিজড়া রাস্তাঘাটে থাকেন। তাদেরও আবাসনের আওতায় আনা গেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন। ইতোমধ্যে যারা উপহারের ঘর পেয়েছেন তারা প্রত্যেকে এখন স্বাবলম্বী। কেউ এখন আর রাস্তাঘাটে ভিক্ষা করতে যায় না। নিজেদের সম্মান বোঝে। স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করছে। এবার আবাসন প্রকল্পে আমরা ঈদ করবো।’

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হিজড়া জনগোষ্ঠীসহ ভূমিহীন মানুষকে ঘর এবং জমি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন তারা শাকসবজি উৎপাদন, হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল লালনপালন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। ফলে তাদের কষ্ট দূর হয়েছে।’

ঘর ও জমি পাওয়ার পর শাকসবজি আবাদ ও ফলের গাছ লাগিয়েছেন রজনী

এখনও জেলার অনেক হিজড়া উপহারের ঘর পাননি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘তাদেরও ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। এতে দেশের সার্বিক উন্নয়ন হবে।এ পর্যন্ত জেলায় চার হাজার ১৮৯ জন অসহায় ও ভূমিহীন পরিবার উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু ঘর দেওয়া হবে; তা প্রক্রিয়াধীন আছে।’ 

/এএম/
সম্পর্কিত
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে স্পষ্টতা চায় বিএনপি
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে বিএনপিসহ ৩ দল ছাড়া একমত বাকিরা: আলী রীয়াজ
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে আলোচনা চলছে: সালাহ উদ্দিন
সর্বশেষ খবর
অক্সিজেন ফেসিয়াল করলে এই ৭ উপকার পাবেন
অক্সিজেন ফেসিয়াল করলে এই ৭ উপকার পাবেন
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপাতত বৈঠকের পরিকল্পনা নেই: ইরান
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপাতত বৈঠকের পরিকল্পনা নেই: ইরান
রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু
রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু
দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে বিপদে অজি দল
দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে বিপদে অজি দল
সর্বাধিক পঠিত
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
দুদকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ভুল করেছেন: ডিজি আক্তার হোসেন
দুদকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ভুল করেছেন: ডিজি আক্তার হোসেন