কাগজে-কলমে থাকলেও এক যুগেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরের কার্যক্রম। পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর না হওয়ায় বছরে সর্বোচ্চ ৪ মাস চলে কার্যক্রম। যা কয়লা আমদানির মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। সারা বছর কাজ করতে না পারায় কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন। এখানে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু করার দাবি শ্রমিকদের।
হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া স্থলবন্দরের শ্রমিক হাসিম উদ্দিন (৬৫)। পরিবারের স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে বন্দরে শ্রমিকের কাজ করে চলে তার পুরো সংসার। বছরে মাত্র ৪ মাস কয়লা আমদানির পর আর কোনও কাজ থাকে না তার। সংসার চালাতে প্রায়ই সুদে টাকা ধার নিতে হয় তাকে। বন্দরে কাজ করে সুদসহ টাকা পরিশোধ করে থাকেন। কিন্তু কাজ না পেলে সুদে ধার করা টাকা পরিশোধ করা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাকে।
তিনি বলেন, ‘হালুয়াঘাট স্থলবন্দর নামমাত্র আছে। বছরে ৩ থেকে ৪ মাস শুধু ভারত থেকে কয়লা আসে। এ সময় আমরা প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কিছুটা কাজ করতে পারি। বাকি সময় কোনও কাজ থাকে না। অনেকেই ঢাকা কিংবা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারে। আমরা যারা বয়স্ক শ্রমিক তারা এলাকার বাইরে গিয়ে কোনও কাজ করতে পারি না। এ সময় আমাদের সুদে ধার করে সংসার চালাতে হয়। পরে কয়লা আমদানির কাজ শুরু হলে ধার পরিশোধ করতে পারি। আর কাজ শুরু না হলে ধার করা টাকা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যায়। এভাবেই পুরো বছর কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়।’
শুধু হাসিম উদ্দিন না, এরকম প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরে কাজ করে তাদের সংসার চালান।
শ্রমিকরা জানান, ভূটানসহ ভারতের সেভেন সিস্টারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে ২০১২ সালের তৎকালীন সরকার হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে কার্যক্রম শুরু করে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও দীর্ঘদিনেও পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালু হয়নি।
বন্দর শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মে দিবস আসে মে দিবস চলে যায়; কিন্তু আমাদের কোনও উন্নয়ন হয় না। বন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়ায় আমরা সারা বছর কাজ করতে পারি না। কাজ না থাকলে শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ে। এ সময় তাদের সংসার চালাতে সুদে ধারকর্জ করতে হয়। পরে কাজ শুরু হলে সেই ধার অনেক কষ্টে পরিশোধ করতে হয়।’
হালুয়াঘাট স্থলবন্দর সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, বন্দর আছে নামে, কোনও কামে নাই। সরকার বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে কিন্তু পূর্ণাঙ্গভাবে এখনও চালু করেনি। বন্দরের এই শ্রমিক নেতা দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ বন্দর চালুর দাবি জানান।
শ্রমিকদের সমস্যার কথা স্বীকার করে হালুয়াঘাট স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক পার্থ ঘোষ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, হালুয়াঘাট গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে চালু করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ তৎপর আছেন। পূর্ণাঙ্গভাবে বন্দর চালু হলে সারা বছর আমদানি-রফতানি কাজ চলবে। তখন শ্রমিকদের সমস্যা থাকবে না।
শুধু আশ্বাস নয়, শ্রমিকদের সারা বছর কাজ করার সুযোগ করে দিতে দ্রুতই হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।