সাভারে একটি ফার্ম থেকে একই পরিবারের তিন কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার শহিদুল ইসলামের মালিকানাধীন প্রান্ত নামের একটি গরুর খামার থেকে লাশগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতরা হলেন, রংপুর জেলার জিয়ারুলের ছেলে জীবন (১৪) ও তার ছোট ভাই নাসির (১৩), ও তাদের ফুফাতো ভাই শাহাদাত (১৫)।
এদিকে, নিহতের স্বজনেরা জেনারেটরের বিষাক্ত ধোঁয়া ও অক্সিজেনের অভাবে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার আমজাদুল হকের কাছ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় ডিজেলচালিত জেনারেটর মেশিনের নির্গত ধোঁয়ার কারণে কক্ষের ভেতরে অক্সিজেনের শূন্যতা দেখা দেয়। এ কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
পুলিশ ও নিহতদের পরিবার জানায়, সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার প্রান্ত ফার্মে কাজ করেন জিয়ারুল। এরই সুবাদে তিনি, তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও বোনের ছেলেকে নিয়ে ওই ফার্মের একটি কক্ষে থাকেন। শুক্রবার রাতের খাবার খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন তার দুই ছেলে ও এক ভাগ্নে। পরে শনিবার সকাল ১০টা পার হয়ে গেলেও ঘুম থেকে না ওঠায় তাদের সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে ওই কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তিন কিশোরের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন তারা।খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের মরদেহগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
নিহতদের স্বজন, রিনা বেগম ও জিয়া অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হওয়ায় তাদের খামারে বিদ্যুৎ ছিল না। আর তিন কিশোর ওই জেনারেটরের কক্ষেই ঘুমিয়েছিলেন। বৃষ্টির কারণ তারা কক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। রাতভর জেনারেটর চলায় বিষাক্ত ধোঁয়ায় কিশোরদের মৃত্যু হয়। এছাড়া ওই কক্ষে বাইরে থেকে আলো-বাতাস প্রবেশের কোনও সরু পথ ছিল না। কক্ষের ভেতরে থাকা জেনারেটরের ধোঁয়া বের হওয়ারও কোনও ব্যবস্থা না থাকায় জেনারেটরের ধোঁয়া থেকেই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
এদিকে, হেমায়েতপুর এলাকার প্রান্ত ডেইরি ফার্মের পার্শ্ববর্তী ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে একটি কারখানার নিরাপত্তা প্রহরী মাহফুজ বলেন, শুক্রবার রাত ৯টার পর থেকে তাদের এলাকায় বেশ কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এ সময় প্রান্ত ডেইরি ফার্মের ভেতর জেনারেটর চালু ছিল বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে সাভার পল্লী বিদ্যুৎ-৩ এর ম্যানেজার সৈয়দ ওয়াহিদুর জামান বলেন, প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় রাত ৯টার পর থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল। তবে জেনারেটরের কক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ থাকলে জেনারেটর থেকে বের হওয়া ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের কারণে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে। আর সে কারণে যে কোনও মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলেও তিনি জানান।
সাভার মডেল থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, নিহত তিন কিশোরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। কী কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ফার্মের মালিক শহিদুল ইসলামকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, শনিবার সকালে সাভারের পৌর এলাকার তালবাগ মহল্লার সেলিম মিয়ার ভাড়া বাড়ি থেকে সুমি আক্তার নামে (২২) এক নারী শ্রমিকের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত সুমি আক্তার স্থানীয় আল-মুসলিম নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। এ ঘটনার পর থেকেই নিহতের স্বামী সোহেল মিয়া পলাতক রয়েছেন।
আরও পড়ুন-
বান্দরবানে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গলা কেটে হত্যা
/বিটি/টিএন/