X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
যশোরে তিন ডাকাতের লাশ উদ্ধার

গণপিটুনি নয়, এলাকাবাসীর দাবি পুলিশ মেরেছে

যশোর প্রতিনিধি
১৫ জুন ২০১৬, ১৪:৪১আপডেট : ১৫ জুন ২০১৬, ১৫:৪৪

যশোর যশোরের ঝিকরগাছায় মঙ্গলবার রাতে ডাকাতির চেষ্টাকালে ‘গণপিটুনিতে’ তিন ডাকাত নিহত হয় বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে স্থানীয়রা বলছেন, মঙ্গলবার (১৪ জুন) রাতে ডাকাতি বা গণপিটুনির বিষয়টি তাদের জানা নেই। তাদের অভিযোগ, এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার সূত্র ধরে পুলিশই এই তিনজনকে হত্যা করেছে।

বুধবার সকালে (১৫ জুন) উপজেলার কৃষ্ণনগরে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে বঙ্গবন্ধু পার্কে পৃথক স্থানে তিনজনের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয়রা। সকাল ৮টার দিকে ঝিকরগাছা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সোমবার (১৩ জুন) গভীররাতে ডাকাতি শেষে ফিরে যাওয়ার সময় তাদের ছুরিকাঘাতে মারাত্মক জখম হয় ঝিকরগাছা থানার এএসআই মোল্যা তৌহিদুল ইসলাম। এ ঘটনার পর স্থানীয় থানার পুলিশ ও কয়েকজন মুখোশধারী ব্যক্তি কৃষ্ণনগরের ওয়াপদা এলাকায় জেলে পল্লীতে অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা ২০টির বেশি টিনের ঘর কুপিয়ে সেগুলো ছিন্নভিন্ন করে এবং তাদের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে যায়।

স্থানীয়দের ধারণা, পুলিশের কর্মকর্তা ছুরিকাহত হওয়ার  পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে এই তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে।

কৃষ্ণনগর কাটাখাল এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সোমবার রাতে ওয়াপদা পাড়ায় ডাকাতি এবং ডাকাতদের ছুরিতে এএসআই তৌহিদুল আহত হওয়ার পর থেকে গোটা ঝিকরগাছা পৌর এলাকা নিস্তব্ধ ছিল। অন্যদিন রাতে পুলিশ এই এলাকায় টহল দিলেও মঙ্গলবার রাত ৯টার পর থেকে স্থানীয়রা দোকানপাট দ্রুত বন্ধ করতে থাকেন। রাত ১১টার পরে এই সড়কে কোনও যানবাহন চলতে দেওয়া হয়নি।

স্থানীয় একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, রাতে ডাকাতি বা গণপিটুনির কোনও কথা আমরা শুনিনি। তিনজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, অথচ চিৎকার চেঁচামেচি হবে না- এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

আসলে কী ঘটেছে কেউ তা মুখ ফুটে বলতে চাচ্ছেন না।

নিহত তিনজনের পরিচয় এখনও মেলেনি। তবে এদের একজনের বয়স ৩০ থেকে ৩২ বছর এবং অন্য দুজনের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি বলে স্থানীয়রা জানান। তাদের প্রত্যেকের গায়ে হাফশার্ট ও গেঞ্জি এবং পরনে চেক লুঙ্গি রয়েছে। মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত লেগে থাকায় গুলি, না ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে- তা বোঝা যাচ্ছে না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহতদের কানের পাশে জমা রক্ত এবং পার্কের দেয়ালে যেখানে লাশের মাথা ছিল সেখানে দলা দলা চুল সেঁটে থাকতে দেখা গেছে।

ঝিকরগাছা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম জানান,  মঙ্গলবার রাতে তার এলাকায় কোনও ডাকাতি বা গণপিটুনির কথা শোনেননি। সকালে বঙ্গবন্ধু পার্কে তিনজনের লাশ পড়ে রয়েছে শুনে তিনি অন্যদের মতো দেখতে এসেছেন। এই তিনজন তার ওয়ার্ডের লোক নন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

যোগাযোগ করা হলে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কৃষ্ণনগর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক নিটল বলেন, রাতে তারাবির নামাজ পড়ে বাড়ি এসে ঘুমিয়ে পড়ি। গণপিটুনির কোনও কথা বা শব্দ রাতে শুনিনি। তবে সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি- বঙ্গবন্ধু পার্কে তিনজনের লাশ পড়ে আছে। আমিও লাশ তিনটে দেখেছি। এরা আমার ওয়ার্ডের কেউ না-এটি নিশ্চিত করে বলতে পারি।

কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে- এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারবো না। শুনেছি গণপিটুনিতে মারা গেছে- এরচেয়ে বেশিকিছু বলার নেই আমার।

এ বিষয়ে ঝিকরগাছা থানার ওসি মোল্যা খবির আহমেদ জানান, মঙ্গলবার গভীররাতে ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগর এলাকায় ডাকাতদের উপস্থিতি টের পেয়ে স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া করে। তাদের মধ্যে তিনজন ধরা পড়ে এবং গণপিটুনিতে তারা মারা গেছে।

কিন্তু, এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে গণপিটুনি নয় পুলিশই তাদের হত্যা করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি মোল্যা খবির বলেন, জনগণ তো কত কিছুই বলে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলেই বোঝা যাবে কিভাবে মারা গেছে তারা।

যশোর পুলিশের এএসপি সার্কেল ভাস্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে ঝিকরগাছার ওয়াপদা পাড়া এলাকায় ডাকাতির চেষ্টা করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয়দের পিটুনিতে তিনজন নিহত হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার গভীর রাতে একদল মুখোশধারী ডাকাত ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগর ওয়াপদা রোড এলাকায় লিটন ড্রাইভারের বারান্দার গ্রিল ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। ডাকাতরা এসময় লিটন ড্রাইভার ও তার স্ত্রীকে মারপিট করে ৭ ভরি স্বর্ণের গহনা ও কয়েক হাজার নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। তখন থানার টহল পুলিশ ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ৫টি বোমা নিক্ষেপ করে। দুটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এ সময় এএসআই তৌহিদ এক ডাকাতকে জাপটে ধরলে তার হাতে থাকা ছুটি দিয়ে তাকে আঘাত করে পালিয়ে যায়। এএসআই তৌহিদ বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

আরও পড়ুন- 

আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলা: ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, সাতজনের যাবজ্জীবন

জাসদ ভুল করে থাকলে ইতিহাস তার বিচার করবে: ইনু

/এফএস/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধর্ষণের অভিযোগ: জুজুৎসুর নিউটনসহ ২ জন রিমান্ডে
ধর্ষণের অভিযোগ: জুজুৎসুর নিউটনসহ ২ জন রিমান্ডে
ভাইরাল সেই বক্তব্যের বিষয়ে কুষ্টিয়া আ.লীগ সভাপতিকে শোকজ
ভাইরাল সেই বক্তব্যের বিষয়ে কুষ্টিয়া আ.লীগ সভাপতিকে শোকজ
ঢাকার চেয়ে আফ্রিকার ছোট শহরের বাসগুলোও সুন্দর: সড়কমন্ত্রী
ঢাকার চেয়ে আফ্রিকার ছোট শহরের বাসগুলোও সুন্দর: সড়কমন্ত্রী
৮৫ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের মামলায় আসামির যাবজ্জীবন
৮৫ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের মামলায় আসামির যাবজ্জীবন
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’