নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মরমী কবি পাগলা কানাইয়ের ১২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে কবির জন্মভিটা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে পাগলা কানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মঙ্গলবার সকালে কবির মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দুপুর ২টায় দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ ও বিকেল সাড়ে ৫টায় কবি রচিত সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজা উর রাফিন সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন, জেলা পরিষদ প্রশাসক আব্দুল ওয়াহেদ জোয়ারদার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।
বাউল ও মরমী সঙ্গীতের এ লোক কবি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে বাংলা ১২১৬ সালের ২৫ ফাল্গুন জন্ম গ্রহণ করেন এবং আজকের এদিনে বাংলা ১২৯৬ সালের ২৮ আষাঢ় তিনি মারা যান।
জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই তিনি দুরন্ত ও আধ্যাত্মিক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। বাল্যকালে পিতৃহারা পাগলা কানাইয়ের ঘরে মন বসেনি। মানুষের বাড়ি তিনি রাখালের কাজ করেছেন। ফলে অর্থের অভাবে পড়ালেখা হয়নি। গরু চরাতে গিয়ে ধুয়ো জারি গান গাইতেন। নিরক্ষর হলেও তার স্মৃতিশক্তি ও মেধা ছিল প্রখর। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গান রচনা করে নিজ কণ্ঠে পরিবেশন করতেন। সঙ্গীতে যেমন তিনি ইসলাম ধর্মের তত্ত্বকে প্রচার করেছেন তেমনি হিন্দু পুরাণ রামায়ণ ও মহাভারত থেকেও নানা উপমার প্রয়োগ করেছেন। এ কারণেই তার গান সার্বজনীনতা লাভ করেছে। তার মধ্যে বাউল ও কবিয়াল এ দুয়ের যথার্থ মিলন ঘটেছে। পাগলা কানাইয়ের অসংখ্য গান গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
দেহতত্ত্ব, জারি, বাউল, মারফতি, ধুয়াসহ অসংখ্য মুর্শিদী গানের রচয়িতা মরমী কবি পাগলা কানাই।
পাগলা কানাই সম্পর্কে কাঙাল হরিনাথ (১ম খণ্ড) গ্রন্থে জলধর বাবু বলেছেন, ‘কানাইয়ের গান শুনলে লোকে পাগল হইয়া যায়।’ তার মতে, ‘দেহ জমি চাষ না করলে সেখানে ফসল হয় না।
এ পর্যন্ত পাগলা কানাই রচিত তিন শাতাধিক গান সংগৃহীত হয়েছে।
মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন, ড. মাযহারুল ইসলাম, আবু তালিব, আমিন উদ্দিন শাহ, দুর্গাদাস লাহিড়ী, উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মনীষীরা পাগলা কানাইয়ের গান সংগ্রহ ও গবেষণা করেছেন।
/এসএনএইচ/টিএন/