X
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় ৬ বছরে নিখোঁজ ৮

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
১৫ জুলাই ২০১৬, ১০:০৫আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৬, ১০:১২

missing কুষ্টিয়ায় গত ছয় বছরে আটজন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
জানা যায়, কুষ্টিয়ায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ,কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রশিবির নেতা আল মোকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহ।
এছাড়া কুষ্টিয়া পৌরসভার কমিশনার আলেক মাহমুদ,কুমারগাড়া মসজিদের ইমাম এস এম রকিব,কুমারখালী উপজেলার কয়াগ্রামের জাফর ইকবাল,সদর উপজেলার বালিয়াপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও কুষ্টিয়া শহরের নতুন কোর্টপাড়া এলাকার সরোয়ার হোসেন সরোও নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেন।
তবে এসব মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন এমনই দাবি স্বজনদের। জানা গেছে,চলতি বছরের গত ২৯ এপ্রিল কুষ্টিয়া শহরতলীর কুমারগাড়া মসজিদের ইমাম এস এম রকিবকে সাদা পোশাকের পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন নুর ইসলাম সুজন জানান,রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাদা পোশাকের কয়েকজন লোক নিজেদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে মসজিদের পাশে নিজ রুম থেকে এস এম রকিবকে তুলে নিয়ে যায়।

রকিবের ভাই আবুল হাসান জানান,আমার ভাইকে গত ২৯ এপ্রিল কুমারগাড়া মসজিদ থেকে সাদা পোশাকে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে ভাইয়ের কোনও সন্ধান নেই। রকিব পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে।

২৮ জানুয়ারি কুষ্টিয়া শহরের মঙ্গলবাড়িয়া বাজারে আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র আবুজর গিফারীকে সাদা পোশাকে র‌্যাব পরিচয়ে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পরের দিন ২৯ জানুয়ারি আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবু দাউদ কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন (নম্বর ১৪২৫)। এখন পর্যন্ত তার কোনও সন্ধান মেলেনি।

আবুজর গিফারী চুয়াডাঙ্গা জেলার দৌলতদিয়া এলাকার আমির হোসেনের ছেলে। সে কুষ্টিয়া শহরের মঙ্গলবাড়িয়া বাজারে আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার দাওয়ারে হাদিস ক্লাসের ছাত্র।

২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে জাফর ইকবাল নিখোঁজ হয়। জাফরের স্ত্রী ববি আক্তার অভিযোগ করেন,গত বছর ৯ নভেম্বর রাত ১টার দিকে পুলিশের পোশাক পরিহিত ৫/৬ জন লোক ঘরের মধ্যে ঢুকে  জাফরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আজ অব্দি তার কোনও খোঁজ নেই।

এদিকে, একই বছর ৫ অক্টোবর কুষ্টিয়া শহরের নতুন কোর্টপাড়া এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে সরোয়ার হোসেন সরোকে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে নিজ বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তার কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজ সরোর স্ত্রী জিনিয়া আক্তার জানান,রাত পৌনে ১১টার দিকে বাসার নিচে দোকানের সামনে থেকে পুলিশ পরিচয়ে আমার স্বামীকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তার কোনও খোঁজ মেলেনি।

এদিকে, ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ নিখোঁজ রয়েছেন। জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে যুবলীগ কর্মী সবুজ খুন হাওয়ার ঘটনায় ওই হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে। হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর পরই তিনি নিখোঁজ হন।

পরিবারের দাবি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে র‌্যাব আটক করে। তবে র‌্যাব তাদের আটকের বিষয়টি এখন পর্যন্ত অস্বীকার করে এসেছে। ওই ঘটনার পর গত বছরের ২৬ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি লাবু কুষ্টিয়ায় ফিরে আসলেও সবুজ ফিরে আসেননি।

সবুজের সন্ধান চেয়ে তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া আদালতে পিটিশন দাখিল করেন। ওই পিটিশনের বিষয়ে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে পুলিশ  জানায়,সবুজ ও লাবুকে তারা আটক বা গ্রেফতার করেনি।

২০১২ সালের ৪ নভেম্বর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রশিবিরের দুই নেতা আল মোকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহ অপহৃত হন। এখনও তাদের খোঁজ মেলেনি। অপহৃত ওই দুই ছাত্র ঢাকা থেকে নৈশকোচে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার সময় ঢাকার সাভারের নবীনগর এলাকায় র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তাদের বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তারা দুজনই নিখোঁজ রয়েছেন।

আল মোকাদ্দাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ বিভাগের এবং ওয়ালিউল্লাহ দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ ও দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষকসহ ছাত্রছাত্রী ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা তাদের উদ্ধারের দাবিতে ক্লাসবর্জন,মানববন্ধন ও সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।

এছাড়া নিখোঁজ দুই ছাত্রকে উদ্ধারের জন্য ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের পুলিশ সুপারকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি দুই ছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকেও ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লিখিতভাবে অপহরণের ঘটনা জানানো হয়।

২০১০ সালের ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া শহরের কাটাইখানা মোড় এলাকা থেকে সাদা পোশাকে পৌরসভার কাউন্সিলর আলেক মাহমুদকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনার পর থেকে আলেক মাহমুদ নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ এসব ব্যক্তি আদৌ বেঁচে আছেন কি না তার কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য কারও কাছে নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কে বা কারা ওই ব্যক্তিদের উঠিয়ে নিয়ে গেছে, পুলিশের কাছেও এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় চিসিম বলেন,ইবির দুই ছাত্র নিখোঁজের ঘটনাটি কুষ্টিয়া এলাকায় ঘটেনি। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সবুজ একটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় পুলিশ তাকে খুঁজছে। কিন্তু এখনও তার সন্ধান মেলেনি।

নিখোঁজ অন্যদের বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

আরও পড়ুন: বগুড়ায় নিখোঁজ ১৭ জন, জঙ্গি সন্দেহ ৬ জনের দিকে

/এইচকে/এবি/আপ-এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শিশু কন্যাকে ফেরত পেতে আদালতে বাবা 
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শিশু কন্যাকে ফেরত পেতে আদালতে বাবা 
টিফিন বক্সের ভ্যাপসা গন্ধ দূর করার ৫ উপায়
টিফিন বক্সের ভ্যাপসা গন্ধ দূর করার ৫ উপায়
ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে ৯ জন আহত
ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে ৯ জন আহত
সর্বাধিক পঠিত
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, জানালেন ওবায়দুল কাদেরঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
পাউবোর দুই প্রকৌশলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পাউবোর দুই প্রকৌশলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বাংলাদেশ দলে খেলতে না পারলে আমি মরে যাবো না’
‘বাংলাদেশ দলে খেলতে না পারলে আমি মরে যাবো না’