X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘যুদ্ধ হয়েছিল একবার, তবু নিত্য দেখি নতুন মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভুক্ত হন’

বিজয় রায় খোকা, কিশোরগঞ্জ
০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:১৪আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:১৭

মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

দেশকে রক্ষা করতে ’৭১ এ যুদ্ধে গিয়েছিলেন। আজও তিনি যুদ্ধ করে চলেছেন। তবে তা টিকে থাকার যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে ৪৫ বছর আগে। তখন বিজয়ীর বেশে ঘরে ফিরেছিলেন আজকের সত্তরোর্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বাবা নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর। ভাইবোনদের সবার মধ্যে বড় হওয়ায় সংসারে দায়িত্ব ছিল বেশি। যুদ্ধ শুরু হলে নিজের বিবেককে জাগ্রত করে তাতে অংশ নিয়ে আরও বড় দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

সেদিনের নানা স্মৃতিকথা আর আজকের দিনের আক্ষেপ তিনি প্রকাশ করেন বাংলা ট্রিবিউনের কাছে। হারানো যোদ্ধা বন্ধুর মুখ মনে পড়ে মন যেমন মুষড়ে ওঠে। মুক্তিযোদ্ধার নিত্য নতুন তালিকা দেখেও তেমনই ভেঙে পড়েন।  

পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর-রাজাকার-মিলিশিয়া মিলিয়ে প্রায় ১৫০ জন পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্য আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিলেন এ মুক্তিযোদ্ধা। সম্মুখযুদ্ধে একের পর এক বিজয়নিশান উড়িয়েছেন।  মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে শেষ করেন স্নাতক স্তর। চাকরির আশায় না থেকে নিজেকে গড়ে তোলেন একজন যন্ত্র প্রকৌশলী হিসেবে। বাবার চাকরির সুবাদে কিশোরগঞ্জ সদরে এসে শুরু করেন মোটরসাইকেল মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানটি আজোও বুকে আকঁড়ে ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পৈত্রিক ভিটেবাড়ি চলে গেছে দখলবাজদের হাতে। সরকারের কাছে তদবির করেও দখলমুক্ত করা যায়নি, এমনটাই জানালেন। দীর্ঘদিন যাবৎ কিশোরগঞ্জ শহরের ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। হৃদরোগে ভুগছেন অনেকদিন ধরে। আগের সেই শারীরিক সামর্থ্য আর নেই। এরপরও গরীব-নিষ্পেষিত মুক্তিযোদ্ধাদের কষ্ট দেখামাত্রই ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। এমনকি তাদের জন্য ২০০৭ সালে কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গড়ে তোলেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সংস্থা। যেখানে অর্থাভাবে কষ্ট পাওয়া মানবেতর জীবনযাপন কাটানো মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া হয় সম্মান। মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধার আসনটুকু যেন পুনরাবিষ্কার করেন।

বাংলা ট্রিবিউনকে একাত্তরের এ বীর যোদ্ধা বলেন, সে সময়ের স্মৃতিচারণ যুগপৎ আনন্দ ও বিষাদের। মনে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তথাকথিত শ্রেষ্ঠ সৈনিকরা ‘নারায়ে তাকবির’ বলে এই শস্য শ্যামল সবুজ বাংলার নিরীহ জনগণকে হত্যা করা শুরু করেছিল। আজ থেকে ৪৫ বৎসর আগে এভাবেই শুরু হয়েছিল বাঙালি নিধনযজ্ঞ। মুক্তিযোদ্ধারা বাংলার ভৌগলিক স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম নয় মাসের অসম এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে। স্বদেশ ভূমিকে করেছিলাম হানাদারমুক্ত। হতাশা আর পরাজয়ের গ্লানিতে সেদিন পাকিস্তানিরা ছিল মাথা নিচু করে চলে গিয়েছিল। পক্ষান্তরে আমরা, মুক্তিযোদ্ধারা ছিলাম গর্বিত। আজ একটি বিষয় আমাকে পীড়া দেয় ।’

কী সে বিষয়? রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘এদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে একবারই । মুক্তিযোদ্ধারাও তাতে নিয়েছেন একবারই। আমাদের দেশে তো প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধ হয় না। তবু নিত্য দেখি নতুন মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভুক্ত হন । এতে করে যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা, তাদেরকে বার বার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে হচ্ছে।’

গরীব মুক্তিযোদ্ধারা যাতে জীবনের বাকিটা সময় একটু স্বস্তিতে বাঁচতে পারে, সে ব্যবস্থাটুকু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

/এইচকে/

সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
পিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগপিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার