X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে ধরলার ভাঙনে দিশেহারা দুই হাজার পরিবার

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:৫৯আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:৫৯

তীব্র নদী ভাঙনে হুমকিতে আবাদি জমি কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চার গ্রামের প্রায় দুই সহস্রাধিক পরিবার। ধরলার ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী- সোনাহাট স্থলবন্দর সড়ক। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের কাছে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেও কোনও সাড়া পায়নি ভাঙনের শিকার নদী তীরবর্তী গ্রামের অধিবাসীরা।

সরেজমিনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের মাত্র ৫০০ মিটার পশ্চিমে নানকা, নন্দদুলাল, কাইম বড়াইবাড়ী ও সাতভিটা গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার ধরলার ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে। নানকা গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে হাওরাট্যাক গ্রাম ধরলার ভাঙনে একেবারে বিলীন হয়েছে। বসতভিটা হারিয়ে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে তারা। যেকোনও সময় নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার হুমকিতে থাকা আবাদি জমিতে অনেকে বোরো ধান রোপনে ব্যস্ত। কেউবা ভিটেমাটি ও গবাদি পশু হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে নিজেরাই কাধে নিয়েছে হালের বোঝা। কয়েক বছর ধরে ভাঙনের শিকার এই মানুষগুলোর অভিযোগ, এখন পর্যন্ত ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকারি কোনও সহায়তা পাননি তারা।

নানকা গ্রামের ফুলজান, আমজাদ, আকবর আলী, আব্দুর রহমান, আব্দুল গণি, জগমনের চর গ্রামের নজরুল ইসলামসহ প্রায় শতাধিক মানুষ এখন অন্যের জমিতে বাস করছেন।

নানকা গ্রামের ফুলজান জানান, ধরলার ভাঙনে তিনি প্রায় ৩০ বিঘা জমি হারিয়েছেন। অসুস্থ স্বামী আহাদ আলীকে নিয়ে সংসার চালানোই এখন কঠিন। জগমনের চর গ্রামের নজরুল ইসলাম প্রায় দুই একর জমি হারিয়ে এখন বাস করছেন মোল্লা পাড়ায়। একই গ্রামের আবু বকর হারিয়েছেন প্রায় ১৪ বিঘা জমি। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় অসহায় এই মানুষগুলো ভূমি ও পরিবারের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে শেষ পর্যন্ত নিজ উদ্যোগে সম্মিলিতভাবে বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে নদী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে কিনা তারা জানে না।

ভিটেমাটি ও গবাদি পশু হারিয়ে নিজেরাই হাল টানছেন ধরলার  ভাঙনে ভিটেহারা আইয়ুব ও আব্দুর রহমান নিজেদের এক খন্ড জমিতে নিজেরাই ঘাড়ে করে মই টানছিলেন। জানতে চাইলে তারা বলেন, নদী ভাঙনে ভিটে হারিয়ে হালের গরু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এখন অবশিষ্ট এক টুকরো আবাদি জমিতে ফসল না ফললে না খেয়ে মরতে হবে।

নানকা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক শামসুল আলম  বলেন, ‘ধরলার ভাঙনের তীব্রতায় আমরা অসহায়। বসতবাড়ি ও আবাদি জমি হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছে, অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করে কোনও সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু দীর্ঘ এলাকা জুড়ে ভাঙন চলতে থাকায় আমরা কুলিয়ে উঠতে পারছি না।’

তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত সবাই মিলে প্রায় দেড় হাজার বাঁশ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে ভাঙন প্রতিরোধে আরও প্রায় ৫ হাজার বাঁশ ও ২০ হাজার বস্তা প্রয়োজন। বালু তারা নদী থেকেই উত্তোলন করার ব্যবস্থা করেছেন। এ অবস্থায় তারা সরকার ও সামর্থবান ব্যক্তিদের সহায়তা কামনা করেছেন।

নিজ উদ্যোগে বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে নদীভাঙন রোধের চেষ্টায় গ্রামবাসী ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম জানান, নিজেরা ভাঙন রোধে উদ্যোগ নিলেও এখন পর্যন্ত তারা কোনও অর্থ কিংবা কারিগরি সহায়তা পাননি। গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বাঁশ সংগ্রহ করে তা নদীর ভাঙন প্রবণ তীর দিয়ে পাইলিং করার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি কোনও সাহায্য তারা পাচ্ছেন না।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম জানান, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙন প্রবণ এলাকাগুলোর ভাঙন রোধে অর্থ চাহিদাসহ বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এলাকাবাসীর সম্মিলিত উদ্যোগে ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কারিগরি সহায়তা সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই  প্রকৌশলী বলেন, ‘এটা  একটা দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ। আমি আমার কার্যালয়ের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীদের দ্রুত সেখানে গিয়ে  স্ট্রং টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছি।’

ধরলার ভাঙনের শিকার এই গ্রামগুলোর অধিবাসীদের আবেদন প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছি। জেলা পরিষদ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

/বিটি/

 আরও পড়ুন:

মুফতি হান্নানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজ আদায়
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজ আদায়
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
ফেসবুক স্টোরিতে লালনের গান, আটক ব্যক্তির জামিন
ফেসবুক স্টোরিতে লালনের গান, আটক ব্যক্তির জামিন
খালেদা জিয়ার দুই মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানি ২১ জুলাই
খালেদা জিয়ার দুই মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানি ২১ জুলাই
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ