X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এক চিকিৎসকের একাধিক চেম্বার: ভোগান্তিতে রোগীরা

আতাউর রহমান জুয়েল, ময়মনসিংহ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৭:৪০আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৭:৫৩

ময়মনসিংহে ডাক্তারদের একাধিক চেম্বার গত বছরের আগস্ট মাসে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে যোগ দেন ডা. মজিবুর রহমান খান। কিন্তু হবিগঞ্জ নয়, তিনি ময়মনসিংহ শহরের বেশ কয়েকটি প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন। একেক সময়ে একেক চেম্বারে রোগী দেখার কারণে তার রোগীদেরও ছুটতে হয় চেম্বার থেকে চেম্বারে।
ডা. মজিবুর রহমানের মতো ময়মনসিংহের বেশিরভাগ চিকিৎসকই শহরের একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আশপাশের বিভিন্ন জেলায় চেম্বারে রোগী দেখে থাকেন। আর এ কারণে রোগীদেরও সময় হিসাব করে ছুটতে হয় এক চেম্বার থেকে অন্য চেম্বারে। কোনও চেম্বারে রোগী দেখিয়ে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে তার রিপোর্ট দেখাতে হয় অন্য চেম্বারে গিয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট এবং মেডিসিন, হৃদরোগ, বাতজ্বর ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে; আবার কোথাও সহকারী অধ্যাপকের পরিচয় দিয়ে ময়মনসিংহের ১৫ থেকে ২০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের চেম্বারে রোগী দেখছেন ডা. মজিবুর রহমান খান। নিজেকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরিচয় দিলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদে নিযুক্ত, তবে সেখানেও তিনি অনুপস্থিত। হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. গোলাম মাওলা বাংলা ট্রিবিউনকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ডা. মজিবুর রহমান খান গত বছরের আগস্ট মাসে হাসপাতালে যোগ দেন। দুই সপ্তাহ পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিনি অনুপস্থিত আছেন। ডাকযোগে অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটির আবেদন পাঠিয়েছেন তিনি। তাকে মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হলেও তিনি উপস্থিত হননি।’
ময়মনসিংহে ডাক্তারদের একাধিক চেম্বার ডা. মজিবুর রহমানের নামে অভিযোগ রয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরপাড়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একাধিক মালিক বলেন, রোগীদের আকৃষ্ট করতে তিনি সহযোগী অধ্যাপকের পদবী সাইনবোর্ডে ব্যবহার করছেন। এছাড়া রোগী দেখার পর চেম্বারেই রোগীদের শরীরে ভিটামিন ইনজেকশন পুশ করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকেন। এসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলার জন্য ডা. মজিবুর রহমান খানের ব্রাম্মপল্লী রোডের নিউ পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে দেখা করতে গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কোনও কথা না বলে দ্রুত চেম্বার ত্যাগ করেন।
এদিকে, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আমিনুল ইসলাম শুক্রবারে টাঙ্গাইলের মধুপুরে, শনিবার মুক্তাগাছায়, সোমবার নেত্রকোনা ও সপ্তাহের বাকি চার দিন ময়মনসিংহের সেফওয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে রোগী দেখেন। এ বিষয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অফিসের কাজ শেষ করে অন্যান্য চিকিৎসকদের মতো আমিও বিভিন্ন চেম্বারে রোগী দেখি। এতে আমার কাজের কোনও সমস্যা হয় না।’ তবে সেফওয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বার সহকারী এনামুল হক বলেন, ‘স্যার অন্য জেলায় থাকাকালেও রোগীরা আসেন এবং তার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। অনেক রোগী আবার এসে স্যারকে না পেয়ে অন্য যেখানে তিনি চেম্বার করেন সেখানে যেতে বাধ্য হন।’
ময়মনসিংহে ডাক্তারদের একাধিক চেম্বার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক মেডিসিন লিভার বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. চিত্ত রঞ্জন দেবনাথ দুপুরে হাসপাতালের সামনেই অবস্থিত পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করেন। সন্ধ্যার পর তিনি চামড়াগুদাম রোডের নোভা ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে এবং সুযোগমতো ল্যাব এইড সেন্টারে রোগী দেখেন। একাধিক চেম্বারে রোগী দেখায় রোগীদের হয়রানির কথা স্বীকার করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের অনুরোধ ফেলতে পারি না। এজন্যই একাধিক চেম্বারে রোগী দেখতে হয়।’
নেফ্রোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান রতন আবার রোগী দেখেন শহরের সেহড়া রোডের সায়েম ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চরপাড়া ডেল্টা হেলথ সেন্টারে। এর বাইরেও ময়মনসিংহের আরও অনেক চিকিৎসকই একাধিক চেম্বারে রোগী দেখেন।
চিকিৎসকদের একাধিক চেম্বারে বসায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। শেরপুর থেকে আসা এক রোগীর স্বজন আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুপুরে রোগী নিয়ে এসে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একজন লিভার বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েছি। তিনি বেশকিছু টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট দেখাতে বলেছেন। কিন্তু রাত ৯টা পর্যন্ত ওই চেম্বারে তিনি আসেননি। শেষ পর্যন্ত নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে গিয়ে তাকে পেয়েছি।’
নিউ পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মোরাদ হোসেন কানন বলেন, ‘চিকিৎসকেরা একাধিক চেম্বারে বসায় রোগী ও স্বজনেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ কারণে রোগীদের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হয় তাদের। রোগীরাও আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। এতে আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
একাধিক চেম্বারে রোগীর দেখার বিষয়ে ময়মনমসিংহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একাধিক প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখলে রোগীদের অসুবিধা হয়। বিশেষ করে রোগী দেখে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করাতে দিয়ে তার রিপোর্ট দেখার সময় যদি তিনি অন্য কোনও চেম্বারে থাকেন, তবে রোগীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।’
ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. নূর মোহাম্মদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার বিষয়ে সরকারি কোনও বিধি নেই। এই সুযোগে কিছু কিছু চিকিৎসক একাধিক চেম্বারে রোগী দেখেন। তবে একই শহরে একজন চিকিৎসকের একাধিক চেম্বার থাকা উচিত না।’
/টিআর/ আপ-এমডিপি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাগেরহাটে ট্রাকচাপায় দুই ভাইসহ ৩ ভ্যানযাত্রী নিহত
বাগেরহাটে ট্রাকচাপায় দুই ভাইসহ ৩ ভ্যানযাত্রী নিহত
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
বেসিস নির্বাচন: সদস্যদের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল করতে চান সহিবুর রানা
বেসিস নির্বাচন: সদস্যদের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল করতে চান সহিবুর রানা
প্রিমিয়ার লিগে ফিরছে লেস্টার
প্রিমিয়ার লিগে ফিরছে লেস্টার
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!