X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘এ ধর্মঘট আমারে কী দিলো?’

আলমগীর চৌধূরী, জয়পুরহাট
০২ মার্চ ২০১৭, ২২:৩৫আপডেট : ০২ মার্চ ২০১৭, ২২:৪৪

নিহত শাহিনুরের গ্রামের বাড়ি (বামে) ও তার স্ত্রী মুর্শিদা (ডানে) পাঁচ ভাই আর চার বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন বাস শ্রমিক শাহিনুর রহমান। সংসার চালাতে গিয়ে অনেক ছোটবেলায় যুক্ত হন এই পেশায়। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌর সদরের পশ্চিম বালিঘাটা মহল্লায়। সর্বশেষ তিনি কাজ করেছেন ঢাকা কোচ এসআই ট্রাভেলসের হেলপার হিসেবে। অভাব-অনটনের সংসারে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে সক্ষম উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে নিহত হওয়ার পর সেই শাহিনুরের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) শাহিনুরের বাড়িতে কথা হয় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ততক্ষণে শাহিনুরের না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার খবরে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে গোটা পরিবার।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন শাহিনুর। বুধবার (১ মার্চ) গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েকঘণ্টা আগে, সকাল ৮টায় স্ত্রী মুর্শিদার সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন শাহিনুর জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার ফিরবেন বাড়িতে। ততক্ষণ পর্যন্ত সাবধানে থাকার কথা বলেন স্ত্রী মুর্শিদাকে।
কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হয়নি শাহিনুরের। বুধবারেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তার। আর সেই সংবাদে শোকের আঁধার নেমে এসেছে তার গোটা পরিবারে। মুর্শিদার এখন একটাই প্রশ্ন, ‘এ ধর্মঘট আমারে কী দিলো?’
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় শাহিনুরের গ্রামের বাড়ির সামনে যেতেই শোনা যায় কান্নার শব্দ। বাড়ি বোঝাই মানুষ। প্রতিবেশীরা সবাই এসেছেন শাহিনুরের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে। তবে মুর্শিদার চোখে অশ্রুও নেই, কেবলই বিলাপ করছেন তিনি।
শাহিনুরের পরিবারের সদস্যরা জানান, দুই ছেলের বাবা শাহিনুরের কন্যা সন্তানের শখ ছিল। তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর আলট্রাসনোগ্রাম করলে চিকিসকরা নিশ্চিত করেন, এবার কন্যা সন্তানই গর্ভে ধারণ করছেন মুর্শিদা। তাতে ভীষণ খুশি হন শাহিনুর-মুর্শিদা দম্পতি। অনাগত কন্যা সন্তানকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেন তারা। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটে শাহিনুরের সেসব স্বপ্ন আলোর মুখ দেখতে পেল না।
মুর্শিদা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘অভাবের কারণে শাহিনুর পড়ালেখা করতে পারেনি। তাই ওর ইচ্ছা ছিল সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলবে। তাই আর্থিক কষ্ট থাকলেও বড় সন্তানকে স্থানীয় একটি ভালো বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছিলাম। এসএসসির পর ছেলেকে ভালো কলেজেও পড়ানোর ইচ্ছা ছিল শাহিনুরের।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুর্শিদা বলেন, ‘সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। ও (শাহিনুর) কোনও রাজনীতির সঙ্গে ছিল না। পেটের দায়ে বাসে হেলপারি করত। সময় পেলেই বাড়ি ছুটে আসত। ছেলেদের সময় দিত।’
শাহিনুরের বাবা ষাটোর্ধ্ব ছায়ের উদ্দিন বলেন, ‘আমার কোনও জমি-জমা নেই। আমার পাঁচ ছেলের সবাই মেহনত করে সংসার চালায়। শাহিন (শাহিনুর) ছাড়া বাকি ছেলেরা সবাই দিনমজুর। সহায়-সম্বল বলতেও আমাদের কিছু নেই। কেবল আছে দেড় শতকের এই বসতভিটা। আমার অন্য ছেলেদের আয়-রোজগার অনেক কম। শাহিনুরই ছিল আমাদের ভরসা।’ তিনি বলেন, ‘কাকে বাঁচানোর জন্য, কী পাওয়ার আশায় ধর্মঘট হলো? কারও কিছু হলো না, শুধু আমার সন্তানকেই কেড়ে নিল! আমাদের গোটা পরিবারের এখন পথে বসার দশা।’
শাহিনুরের বড় ভাই আব্দুল মান্নান জানান, স্থানীয় শ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পান তারা। পরে ছোট ভাই খালেক ও শাহিনুরের ছেলে মুসা তার মৃতদেগ নেওয়ার জন্য ঢাকা যায়। বিকালে এই তথ্যগুলো বলতে বলতেই ফোন আসে মান্নানের মোবাইলে। কথা শেষ করে তিনি জানান, শাহিনুরের মরদেহ নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছেন খালেক ও মুসা।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন বুধবার (১ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন পরিবহন শ্রমিক শাহিনুর। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক জানান, শাহিনুরের বুকে ও পেটে অনেক ছররা গুলির আঘাত ছিল।

আরও পড়ুন-

একজনকে আহত করেছে এক হাজার শ্রমিক!

গাবতলীর ঘটনায় ৭ পরিবহন শ্রমিকের রিমান্ড

/ইউআই/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী