রাজশাহীতে ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী ও মালদ্বীপের মেয়ে মডেল রাউধা আথিফের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। লাশটি কিভাবে মালদ্বীপে নিয়ে যাওয়া হবে এবং পরিবারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে, এনিয়ে রাউধা আথিফের পরিবার, মালদ্বীপ দূতাবাস, ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। রাউধার লাশ বর্তমানে রামেক হাসপাতালের মর্গে আছে।
শুক্রবার এসব তথ্য জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম।
ইফতেখায়ের আলম জানান, শুক্রবার দুপুর দুটার দিকে রামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে রাউধার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মুনসুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি ময়নাতদন্ত বোর্ড গঠন করে। বোর্ডের সদস্যরা হলেন, ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এমদাদুল হক ও একই বিভাগের বর্তমান সহকারী অধ্যাপক এনামুল হক। তারা তিনজনে উপস্থিত থেকে রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক এনামুল হক বলেন, ‘রাউধার শরীরের কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে গলায় ফাঁস লাগানোর দাগ রয়েছে। এতেই তার মৃত্যু হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। তার শরীরে কোনও পয়জন গেছে কিনা, সেটি নিশ্চিত হতে লাশের ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে, কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।’
এর আগে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, শনিবার দুপুর সাড়ে তিনটায় রাউধা আথিফের লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত, রাউধা আথিফের মা ও ছোট ভাই রাজশাহীতে এসে পৌঁছালেও তারা লাশ দেখতে রামেক হাসপাতালে যাননি।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন,‘মেয়েটির বাবা মোহাম্মাদ আথিফ পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি ভারতে থাকেন। আর রাউধার মা থাকেন মালদ্বীপে ।
রাজশাহী ইসলামী মেডিক্যাল কলেজ সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ রিয়াদ জানান,গত বছরের ৩০ অক্টোবর ভারতে গিয়েছলেন রাউধা আথিফ। আর একই বছরের ১৪ নভেম্বর মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছিলেন।ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য ভারতে যাচ্ছেন।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার তানভির হায়দার চৌধুরী জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আইশা শান শাকির ও রাউধার বাবা মোহাম্মাদ আথিফ । ওই বৈঠক শেষে রাউধার লাশের ময়নাতদন্তের অনুমতি দেন তারা।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধা আথিফের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশকে জানানো হয়েছিল,সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে রাউধা আত্মাহত্যা করেন। তবে পুলিশ পৌঁছার আগেই তার সহপাঠিরা ঝুলন্ত রাউধার লাশ নামিয়ে ফেলেছিলেন।
রাউধা এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে তিনি ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তিনি মালদ্বীপের মাল এলাকার মোহাম্মাদ আথিফের মেয়ে। রাউধা পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং করতেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের ভারতীয় সংস্করণে তিনি মডেল ছিলেন। ওই সংখ্যার প্রচ্ছদে আরও পাঁচ নারী মডেলের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাউধা।
/এপিএইচ/