রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘জরাজীর্ণ’ ভাস্কর্যের পরিচর্যা, নিরাপত্তা এবং ভাস্কর্য রাখার এলাকা দেয়াল তৈরি করে ঘিরে রাখার দাবিতে ভাস্কর্য উল্টিয়ে প্রতিবাদ করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাত পৌনে ১২টার দিকে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় চত্বরে এ ঘটনা ঘটান। তবে দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের এ ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক বলছেন শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভাস্কর্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী স্বাধীন ও ইমরান হোসাইন রনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তারা বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমাদের বানানো এই ভাস্কর্যগুলো এখানে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু এগুলোর পরিচর্যা করা হয় না। এছাড়া এই চত্বরে একটা প্রাচীর দেওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের বলেছি। কিন্তু এখানে কোনও প্রাচীর আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। প্রাচীর না থাকায় বাইরের অনেকেই এসে শিক্ষার্থীদের বানানো এই ভাস্কর্যগুলো ভেঙে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অতীতে।’
তারা আরও বলেন, ‘এ ভাস্কর্যগুলো সংস্কারের জন্য আমরা এগুলো উল্টিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। সোমবার রাতে আমরা ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী মিলে এটা করেছি। কিন্তু আমরা কোনও ভাস্কর্য ভাঙিনি। শুধু কর্তৃপক্ষ যাতে উদ্যোগ নেয় সেজন্যই এটা করা।’
মঙ্গলবার সকালে বিভাগের কর্মচারীরা এসে ভাস্কর্যগুলো উল্টানো দেখে শিক্ষকদের ফোন দেন।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভাস্কর্যগুলোকে উল্টিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। তবে কোনও ভাস্কর্য ভাঙা হয়নি। এছাড়া ওই চত্বরে শিক্ষকদের পাঁচটি চেম্বারের দরজার সামনে ভাস্কর্য রেখে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তবে শিক্ষকরা এ ঘটনাকে অন্যভাবে দেখছেন। নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘এটা কোনও প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। যে শিল্প নিজ হাতে তৈরি করছি, সেই শিল্পকে অবমাননা করে দাবি আদায়ের ভাষা খুবই লজ্জাজনক।’
বিভাগের অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরাও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ‘এই ভাস্কর্যগুলোতে আমাদেরও অংশীদার আছে। আর পরিচার্যা বা প্রাচীরের দাবি আমরাও করি, কিন্তু এভাবে কেন প্রতিবাদ করতে হবে। আমরা অন্যভাবেও এ প্রতিবাদ করতে পারতাম।’
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতির অধ্যাপক মোস্তাফা শরীফ আনোয়ার বলেন, ‘কয়েকজন শিক্ষার্থী এ কাজ করেছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বিশ্বাবিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভাস্কর্য উল্টানোর ঘটনায় চারুকলার সাত শিক্ষার্থী জড়িত বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তারা দাবি করেছেন, এরা সবাই স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের নাম পরিচয় জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এদিকে ভাস্কর্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী স্বাধীন ও ইমরান হোসাইন রনি সাংবাদিকদের বলেন, তারা ৩০-৪০ জন মিলে এই কাজ করেছেন।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বাধীন ও ইমরান বলেন, ‘ভাস্কর্যগুলো সংস্কারের জন্য আমরা উল্টিয়ে রেখেছি। সোমবার রাতে আমরা ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী মিলে এ কাজ করেছি। কিন্তু আমরা কোনও ভাস্কর্য ভেঙে রাখিনি। শুধু কর্তৃপক্ষ যেন উদ্যোগ নেয় সেজন্য এটা করা।’
মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ আনোয়ার বলেন, ‘ইউসুফ আলী স্বাধীন নামে এক শিক্ষার্থী আমাদের কাছে স্বীকার করেছে যে, মাস্টার্সের সাত শিক্ষার্থী এ ঘটনায় জড়িত ছিল। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টা জানাবো। কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
ওই শিক্ষার্থীদের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের সবার নাম আমি জানতে পারিনি। এদের মধ্যে একজন তো মিডিয়ার সামনে স্বীকার করেছেই (ইমরান হোসাইন রনি)। আর বাকিদের বিষয়ে জানতে পারিনি। আমরা তো তদন্ত করতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটা করবে।’
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত সেরকম কিছু বলা যাচ্ছে না। তারা নাকি নিরাপত্তা, প্রাচীর নির্মাণ, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক উন্নয়ন, অতিরিক্ত পুলিশি চৌকির দাবিতে এগুলো করেছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুল হক আজাদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
/এআর/এফএস/
আরও পড়ুন:
‘নিজ হাতে গড়া ভাস্কর্যের অবমাননা প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না’
রাবিতে ভাস্কর্য উল্টানোর ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ছাত্রলীগের
রাবিতে ভাস্কর্য উল্টানোর ঘটনায় চিহ্নিত ৭