গাইবান্ধা সদর উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রামঞ্চলেও দিন দিন ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ১০ জুন পর্যন্ত (৬ মাসে) গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে শিশুসহ ৭০ জন নারীর ধর্ষণ সংক্রান্ত পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে অন্তত আরও ৩০টি ধর্ষণের ঘটনার আপস হয়েছে।
তবে সচেতন মহলের মতে প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণের ঘটনা আরও অনেক বেশি। পরিবারিক ও সামাজিক মর্যাদাসহ আইনি প্রক্রিয়ার বিব্রতকর অবস্থার কথা চিন্তা করে অনেকে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করেন না। পুলিশের দাবি, বেশির ভাগ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে প্রেমের সম্পর্ক থেকে। এছাড়া পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও শত্রুতার কারণেও অনেকে মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছেন।
সর্বশেষ গাইবান্ধা সদর উপজেলায় তিনটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। তিন টি ধর্ষণের ঘটনায় সহযোগীসহ গ্রেফতার হয়েছেন চারজন। বর্তমানে তারা জেলা কারাগারে আছেন। এরমধ্যে গত ২১ মে সদর উপজেলার বড় গোপালপুর গ্রামে ৫৫ বছরের এক ব্যক্তির হাতে সাড়ে তিন বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় সহযোগী ও ধর্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এছাড়া লক্ষ্মীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদলের বিরুদ্ধে লেংগা বাজার মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ছাত্রীর চাচা বাদী হয়ে গত ৩ জুন মোস্তাফিজুর রহমান বাদলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। কিন্তু মামলার সাত দিন পার হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এর আগে, ২৫ মে সদর উপজেলার তুলসীঘাট রেবেকা হাবীব গার্লস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী স্থানীয় স্টুডিওর মালিক মামুন মিয়ার হাতে ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় ২৯ মে সদর থানায় মামলা হলে পুলিশ ধর্ষক মামুন মিয়া ও সহযোগী শাহীন মিয়াকে গ্রেফতার করে।
গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নুরুজ্জামান আহম্মেদ জানান, ১০ জুন পর্যন্ত ধর্ষণ সংক্রান্ত ৭০টি মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের বয়স ৩ থেকে ১৫ বছর। এর মধ্য ২০ জনই স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী। সামাজিক অবক্ষয় ও অপসংস্কৃতির প্রভাবে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। এসব ঘটনা কমাতে হলে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশ ফোরামের আহ্বায়ক খন্দকার জিল্লুর রহমান বলেন,‘হঠাৎ করেই গাইবান্ধায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে। এ কারণে স্কুল-কলেজসহ এলাকায় সভা-সেমিনারের মাধ্যমে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার রায় দ্রুত কার্যকরসহ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’
সাদুল্যাপুর কেএম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান ফারুক বলেন,‘অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অপরাধীরা যেন কোনওভাবেই আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধর্ষণ মামলার বাদীর অভিযোগ, ধর্ষণের ঘটনার পর থানায় মামলা হয়। এরপর তার ডাক্তারি পরীক্ষার হয়। কিন্তু ডাক্তারের সঙ্গে অপরাধীদের যোগসাজসের কারণে ধর্ষণের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ধর্ষককে সহযোগীতা করছে। তাই বিচার পাওয়া নিয়ে তিনি চিন্তিত।
সাদুল্যাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরহাদ ইমরুল কায়েস বলেন, ‘গত ৬ মাসে আমার থানায় ধর্ষণের অভিযোগে ৫-৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। এছাড়াও ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট ও তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
গাইবান্ধা পুলিশ সুপার (এসপি)মো. মাশরুকুর খালেদ বলেন, ‘প্রেম ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে ভিকটিমকে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দেওয়া হয়। এছাড়াও অপরাধীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। তবে ধর্ষণসহ সামাজিক অপরাধ বন্ধে থানা ও কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে স্কুল-কলেজসহ প্রত্যেক এলাকায় সচেতনতামূলক সভা সেমিনার করা হচ্ছে। এছাড়াও এ ব্যাপারে সব মহলকে সজাগ থাকতে হবে।’
/জেবি/
আরও পড়তে পারেন: বান্দরবানের রুমায় ট্রাক খাদে পড়ে নিহত ২, আহত ৬