X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়ে স্বজনহারাদের আহাজারি আর বেঁচে থাকার লড়াই

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
১৬ জুন ২০১৭, ১৮:৩৫আপডেট : ১৭ জুন ২০১৭, ১০:০৬

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের পর

টানা বৃষ্টিতে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সারাদিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজরে পাহাড় ধসে পড়ে। এতে অন্তত ১৫১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। পাহাড় ধসের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটি জেলা। পাহাড় ধসের কারণে রাঙামাটির সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। যাত্রী ও পণ্যবাহী কোনও যানই সেখানে যেতে পারছে না। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ প্রায় শেষের দিকে। যা-ও পাওয়া যাচ্ছে তার দামও আকাশছোঁয়া। একদিকে স্বজনহারাদের আহাজারিতে আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে চলছে জীবিতদের বেঁচে থাকার লড়াই।

রাঙামাটির বাজারে সব ধরনের মাছ-মাংস, শাক-সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মজুদ শেষের দিকে। কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় এতদিন এ জেলার মানুষ অন্য জেলা থেকে আসার মাছের ওপর নির্ভরশীল ছিল। দুর্যোগের কারণে গরু-মহিষ জবাইও বন্ধ রয়েছে। ফলে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।

রাঙামাটি শহরের বাজার

সরবরাহ না থাকায় শহরের বাজারগুলোয় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। শুক্রবার (১৬ জুন) দুপুরে শহরের প্রধান তিনটি বাজার বনরূপা, তবলছড়ি, রির্জাভ বাজার ঘুরে দেখা এ অবস্থা দেখা গেছে।

বনরূপা বাজারে বাজার করতে আসা রুহুল আমিন বলেন, ‘৬০-৭০ টাকায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ১৫-২০ টাকায় বিক্রি করা হতো। গতকাল (বৃহস্পতিবার) জেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আলাদত পরিচালনা করায় দাম কিছুটা কমেছে। গাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সব জিনিসের দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি।’

বাজার করতে আসা সাইদুল বলেন, ‘আগে মরিচ ছিল ৬০ টাকা, আলু ২০ টাকা. পেঁয়াজ ২০-২৫ টাকা তা এখন থেকে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। কিছুই করার নাই খেতে তো হবে।’

রাঙামাটির বাজার

বনরূপা বাজারে তরকারি বিক্রি করতে আসা কমনি চাকমা বলেন, ‘বৃষ্টিতে সব ডুবে যাচ্ছে। আর আমরা তো অনেক সময় তরকারি কিনে বিক্রি করি। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় রানীহাটের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সবজি আনতে পারছি না। এখন যা আসছে তাও আগের তুলনায় অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। কেনার দাম বেশি থাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।’

মুদি দোকানি মো. সোলাইমান বলেন, ‘আমাদের আগের যা মজুদ আছে সেগুলো বিক্রি করছি। যা আরও দু-একদিন চলবে। এরপর কী হবে জানি না। আমরা আগের দামে পণ্য বিক্রি করছি। কোনও পণ্যের দাম বাড়ায়নি।’

যোগাযোগ বন্ধ থাকায় রাঙামাটিতে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ যান চলাচলও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। শুক্রবার বিকালে তেলের দোকান ও পাম্পগুলো খোলা থাকলেও তাদের কাছে কোনও জ্বালানি তেল নেই বলে জানিয়েছে।

শহরের সিএনজি চালক বিজয় ধর বলেন, ‘তেল তো কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। যে কোনও সময় গাড়ি বন্ধ করে দিতে হবে। তেল আসতে পারে নাই, তাই জ্বালানির খুব সংকট। সরকার যদি জ্বালানি তেলের ব্যবস্থা করে না দেয় তাহলে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।’ 

জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী মেসার্স মিন্টু এন্টাপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মালিক আব্দুল সাত্তার মিন্টু বলেন, ‘আমার স্টকে আর কোনও তেল নাই। আমরা ছোট ব্যবসায়ী এক সপ্তাহের মজুদ রাখতে পারি। চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তেল আনা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ ব্যবস্থায় কাপ্তাই হয়ে নৌপথে তেল আনতে যে খরচ পড়বে তা বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। যদি জেলা প্রশাসন আমাদের এই ব্যাপারে সহযোগিতা করেন তাহলে আমরা চেষ্টা করবো।’

রাঙামাটির বাজারে সবজি বিক্রি করছেন এক নারী

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রৌকশলী এমদাত হোসেন বলেন, ‘যেভাবে রাস্তা ভেয়ে গেছে তা ঠিক করতে কিছুটা সময় লাগবে। আমরা ও যৌথবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছি। রাঙমাটি-চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-কাপ্তাই, রাঙামাটি-বান্দরবান সব রাস্তার একই অবস্থা। অগ্রাধিকার ভিত্তি  আগে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম রাস্তা চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সড়ক সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হবে।’

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন থাকায় ৫৭ বছর পর কর্ণফুলী নদী দিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে দুটি লঞ্চ কাপ্তাইর উদ্দেশে ছেড়ে আসে। একইভাবে দুটি লঞ্চ কাপ্তাই থেকে রাঙামাটির উদ্দেশে ছেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, ‘যদি কোনও ব্যবসায়ী পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সহযোগিতা চায় আমরা অবশ্যই দেব। বৃহস্পতিবার রাতে তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের যে বাড়তি খরচ হবে তা আমরা যাচাই-বাছাই করে বিক্রির অনুমোদন দেবো।’

রাঙামাটির একটি তেলের স্টেশন

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, যেভাবে রাস্তাটি ভেঙে গেছে তা মেরামত করতে সময় লাগবে কিন্তু মানুষের যাতায়াতের জন্য যত দ্রুত সম্ভব পাশে বিকল্প রাস্তা তৈরিতে কাজ চলছে। বাজার মনিটরিংয়ে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

টানা চারদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার পর রাঙামাটি শহরে সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবারও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, ১৭ টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় দুই হাজার লোক অবস্থান নিয়েছে।

/এসটি/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক
রোমাকে হারিয়ে ফাইনালে এক পা লেভারকুসেনের
ইউরোপা লিগরোমাকে হারিয়ে ফাইনালে এক পা লেভারকুসেনের
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
শিগগিরই শুরু হচ্ছে উন্মুক্ত কারাগার তৈরির কাজ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
শিগগিরই শুরু হচ্ছে উন্মুক্ত কারাগার তৈরির কাজ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী