ট্রাক চালাতে চালাতে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল ট্রাকের চালক। যে কারণে ট্রাকের স্টিয়ারিংয়ে ছিল হেলপারের হাতে। বেপরোয়া গতিতে ট্রাকটি চালিয়ে যাচ্ছিল সে। সে কারণেই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কলাবাগান এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রাকটি। তাতেই ঈদে বাড়ি ফিরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন পোশাক শ্রমিক। পুলিশ ও দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। তবে ট্রাকটির ড্রাইভার বা হেলপারকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বরদরগা হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার ধীরেন্দ্র নাথ সরকার।
শনিবার (২৪ জুন) ভোর ৬টার দিকে সংঘটিত এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হন। পরে আহতদের উদ্ধার করে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে আরও ছয় জন মারা যান। এ ঘটনায় আরও ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত ট্রাকযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার (২৩ জুন) দুপুর ৩টার দিকে গাজীপুর থেকে রংপুরগামী সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকে চড়ে রওনা দেন ২৫ পোশাক শ্রমিক। পরে যাত্রীদের নিষেধ সত্ত্বেও আরও যাত্রী তোলা হয় ওই ট্রাকে।
আহত পোশাক শ্রমিক সালেহা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রংপুর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকায় চুক্তি হয় ওই ট্রাকের ড্রাইভারের সঙ্গে। রাস্তায় যমুনা সেতুর কাছে এসে আরও কয়েকজন যাত্রী তোলা হয় ট্রাকে। আমরা নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু ড্রাইভার-হেলপার আমাদের কথা শোনেনি।’ সালেহা বলেন, ‘যমুনা সেতু পার হওয়ার পর থেকেই ড্রাইভার ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। আমরা টের পেয়ে ড্রাইভারকে কয়েকবার সাবধান করে দেই। বগুড়া পার হওয়ার পর ড্রাইভার গাড়ির চালানোর দায়িত্ব দেয় হেলপারের ওপর, সে পাশের সিটে শুয়ে পড়ে। এরপর হেলপার নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিল। কিন্তু সে অনেক বেশি গতিতে চালাচ্ছিল ট্রাক। এ কারণেই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়।’
আহত আরেক যাত্রী সামসুল বলেন, ‘আমার চাচাত ভাই আলমগীর, সাদ্দাম, খালাত ভাই দেলোয়ার হোসেন ও মুনির ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। এছাড়া, আমার ভাবি খাদিজা বেগমও আহত হয়েছে। আমাদের সবার বাড়ি লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট গ্রামে।’ ড্রাইভারের বদলে হেলপার গাড়ি চালানোর কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি।
আহত পোশাক শ্রমিক মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই ঈদের সময় বাসে করে বাড়ি যাই। কিন্তু এবার বাসের টিকিট পাইনি। যে কারণে আমরা ট্রাকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা ২৫ জন মিলে ট্রাকটির সঙ্গে চুক্তি করি। কিন্তু ড্রাইভার যমুনা সেতুর ওখানে গিয়ে আরও কয়েকজন যাত্রী তোলে ট্রাকে।’
এদিকে, বরদরগা হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার ধীরেন্দ্র নাথ সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমনিতেই ট্রাকটি সিমেন্ট বোঝাই ছিল। তার ওপর ৪০ জন যাত্রী তোলা হয়েছিল ট্রাকটিতে। ফলে এমনিতেই তারা ঝুঁকিতে ছিলেন। তার ওপর ড্রাইভার ঘুমিয়ে পড়ে হেলপারকে গাড়ি চালাতে দিয়েছিল বলেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
ধীরেন্দ্র নাথ সরকার জানান, ট্রাকটি উদ্ধার করে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আনা হয়েছে। তবে ড্রাইভার ও হেলপারকে পাওয়া যায়নি। তারা আহত হয়েছে কিনা, সেটাও তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।ৎ
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে ট্রাকটিকে উল্টানো অবস্থায় দেখতে পাই।’ যেসব যাত্রী ট্রাকের ওপরে ছিল, ট্রাকটি উল্টে যাওয়ায় তারা সবাই চাপা পড়েন বলে জানান ওসি রেজাউল। এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন-