X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তামনির কী অসুখ জানেন না চিকিৎসকরাও!

মো. আসাদুজ্জামান সরদার, সাতক্ষীরা
০৯ জুলাই ২০১৭, ১৩:২১আপডেট : ০৯ জুলাই ২০১৭, ১৩:৩২

চিকিৎসকরা বলতে পারছেন না, শিশু মুক্তামনি কী রোগে আক্রান্ত বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার ১১ বছরের মুক্তামনি। তার এক হাত ফুলে গিয়ে দেহের চেয়েও ভারি হয়ে গেছে। সাদা রঙের শত শত পোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই ফুলে যাওয়া অংশে। চার বছর ধরে এই ‘বোঝা’ বয়ে বেড়াচ্ছে মেয়েটি। শরীরের অসহ্য ব্যথা ও যন্ত্রণায় মুক্তামনি বসতে পারে না, খেলতে পারে না, স্কুলেও যেতে পারে না। দিনরাত বিছানায় শুয়ে ক্লান্ত সময় কাটাতে হয় তাকে। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, সাতক্ষীরা, যশোর থেকে শুরু করে খুলনা ও ঢাকার বিভিন্ন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেও তাদের কেউই নির্ণয় করতে পারেননি মুক্তামনির রোগ। দরিদ্র বাবা ইব্রাহীম হোসেন তাই একদিকে অর্থাভাবে, অন্যদিকে সঠিক চিকিৎসার অভাবে মেয়েকে নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের ইব্রাহীম হোসেনের মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মুক্তামনি। তাদের গিয়ে দেখা গেছে, মুক্তামনির ডান হাতের ফুলে যাওয়া অংশে সাদা রঙের পোকা জন্মেছে। সারাদিন ব্যাথায় কাতরাচ্ছে ছোট্ট মেয়েটি। ইব্রাহীম জানান, দিনের পর দিন চিকিৎসকের পর চিকিৎসক বদল করেও কোনও লাভ হয়নি। তাদের কেউই মুক্তামনির প্রকৃত রোগ ধরতে পারেননি। বরং যে যার মতো চিকিৎসা করে তার ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এ রোগ মুক্তার দেহের সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এ মুহূর্তে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে উন্নত চিকিৎসা না দিতে পারলে মুক্তামনিকে হয়তো বাঁচানোই সম্ভব হবে না। কিন্তু অর্থাভাবে এখন মেয়ের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না ইব্রাহীম। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহায়তা চেয়েছে অসহায় মুক্তার পরিবার।
মুক্তামনি ও তার যমজ বোন হীরামনি জানা গেছে, কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহীম হোসেনের দুই যমজ মেয়ে হীরামনি ও মুক্তামনি। দেড় বছর বয়স পর্যন্ত ভালোই ছিল ফুটফুটে দুই বোন। কিন্তু কিছুদিন পরই মুক্তার ডান হাতে একটি ছোট ফোঁড়ার মতো গোটা দেখা দেয়। এর চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাতক্ষীরা এবং পরে যশোর, খুলনা ও ঢাকার বিভিন্ন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেও তারা রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। এর পর থেকে মুক্তামনির রোগের মাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকে।
মুক্তার বাবা ইব্রাহীম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি নিজেও অসুস্থ এবং সামান্য মুদি দোকানি। তারপরও বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার-দেনা করে সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছি। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। কিন্তু একেক ডাক্তার একেক কথা বলেন— কেউ বলেন হাড়ের ইনফেকশন, কেউ বলেন ক্যান্সার। কিন্তু মেয়েটার আসলে কী হয়েছে, সেটা কেউ বলতে পারেন না।’
ইব্রাহীম আরও বলেন, ‘খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে এক শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, মুক্তার হাড়ের ক্যান্সার হয়েছে। আবার যশোরের কুইন্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানের ডাক্তার গোলাম কিবরিয়া বলেন রক্তের টিউমারের কথা। কিন্তু তাদের চিকিৎসায় কোনও কাজ হয়নি। সর্বশেষ ঢাকার সিআরপি ও পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তারা ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) পাঠায়। সেখানে ডাক্তার কৃষ্ণাপিয়া বলেন, বোন টিউমার হয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেও কোনও ফল হয়নি। বরং আমি হয়রানির শিকার হয়েছি।’
ইব্রাহীম এখন হতাশ হয়ে গত ছয় মাস মেয়েকে কোনও চিকিৎসা না করিয়েই মুক্তাকে বাড়িতে রেখে কেবল ড্রেসিং করাচ্ছেন। এরই মধ্যে মুক্তার আক্রান্ত হাত ক্রমেই ভারি হয়ে উঠছে, হাতে পোকাও জন্ম নিয়েছে।
যন্ত্রণায় কাতর মুক্তামনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘আমার সবসময় কষ্ট হয়, ডান হাত জ্বালা করে। ঘুমাতে পারি না, বসতে পারি না। হাতের ভেতরে চুলকায়। হাত এত ভারী হয়ে গেছে যে তুলতেই পারি না, খুব কষ্ট লাগে। সবাই যেন আমাকে সাহায্য করে। চিকিৎসার মাধ্যমে আমি ভালো হতে চাই।’
অসহ্য যন্ত্রণায় সারাদিন কাতরায় মুক্তামনি মুক্তামনির যমজ বোন হীরামনি বলে, ‘আমরা দুই বোন আগে একসঙ্গে স্কুলে যেতাম। এখন আর যেতে পারি না। মুক্তামনিকে দেখে অনেকে ভয় পায়। তাই ও আর বাড়ির বাইরেও বের হয় না।’
মুক্তামনির মা আছমা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেয়েটার খুব কষ্ট হয়, বিছানায় হাতের যন্ত্রণায় ছটফট করে। চোখের সামনে মেয়ের যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না। অর্থাভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছি না। কেউ যদি মুক্তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিত, তাহলে শিশুটি হয়ত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।’
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুক্তামনির এ রোগটি বিরল। এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে বলা অনেক কঠিন। তবে ধারণা করা হচ্ছে এটি হাইপারকেরাটসিস। আবার স্কিন ক্যান্সারও হতে পারে। সার্জারি বিভাগের ডাক্তার আরও ভালো বলতে পারবেন।’
ডা. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘এর আগে আমরা বৃক্ষমানব আবুল বাজানদারের প্রায় একই রকম রোগ হতে দেখেছি। সে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে এখন অনেক ভালো। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা ঢাকা মেডিক্যালে এর চিকিৎসা সম্ভব। তবে দ্রুত মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন-

কারাগারের সেই কর্মকর্তাদের যত অনিয়ম!

যশোর জেনারেল হাসপাতালে একদিন বয়সী শিশু চুরি

/এমও/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বন্ধ হচ্ছে না নকল ওষুধ উৎপাদন-বিপণন, বাড়ছে উদ্বেগ
বন্ধ হচ্ছে না নকল ওষুধ উৎপাদন-বিপণন, বাড়ছে উদ্বেগ
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়ে ঘুরে পড়ে আ.লীগ নেতার মৃত্যু
কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়ে ঘুরে পড়ে আ.লীগ নেতার মৃত্যু
মাঠে ফিরেই হাল্যান্ডের গোলে জিতলো ম্যানসিটি
মাঠে ফিরেই হাল্যান্ডের গোলে জিতলো ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক