গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও হাকিমপুর পৌরসভার প্রায় ১৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে স্থলবন্দরের প্রধান সড়কে পানি উঠেছে। যে কারণে রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্দর দিয়ে দু’দেশের মাঝে পণ্য আমদানি রফতানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়।
আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো.হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, কয়েক দিনের টানাবর্ষণে বন্দরের প্রধান সড়কে পানি উঠেছে। যে কারণে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমদানি রফতানি বন্ধ থাকছে। এরপর যে ট্রাকগুলো পণ্য নিয়ে দেশে ঢুকছে সেগুলোকে ঝুঁকি নিয়ে ঢুকছে। এসব কারণে আমদানি রফতানির পরিমাণও কমে এসেছে। বন্দরের ভেতর পর্যাপ্ত পরিমাণে শেড না থাকায় আমদানিকৃত পণ্যগুলো খালাস করা যাচ্ছে না। তাই তাদের পণ্য পচে নষ্ট হচ্ছে। এবং তারা আর্থিক ক্ষতির সন্মুক্ষিণ হচ্ছে। বন্দরের বাইরেও বিভিন্ন আমদানিকারকের গুদামে পানি ঢুকে যাওয়ায়ও মাল পচে যাচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার অশিত কুমার স্যানাল জানান, বৃষ্টির কারণে বন্দরের ভেতরে কোনও ধরনের জলাবদ্ধতা তৈরি হয়নি। বন্দরের ভেতর ট্রাক থেকে পণ্য ওঠানো নামানোসহ সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দরের ভেতরে ছয়টি শেড রয়েছে যাতে কাঁচা পণ্য বিশেষ করে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচসহ অন্যান্য পণ্যের লোড-আনলোড কর হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে অন্যান্য পণ্য লোড-আনলোডে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলা ট্রাকের সঙ্কটের কারণে বন্দর থেকে পণ্য বাইরে নেওয়া যাচ্ছে কম। এর ফলে বন্দরে আটকে থাকা চাল বোঝাই ৩৩১টি ট্রাকে সাড়ে ১১ হাজার টন চাল আটকে আছে। এছাড়াও অন্যান্য পন্যের ৫০টি ট্রাকসহ মোট ৩৮১টি ট্রাক আটকা আছে।
এদিকে কয়েকদিনের টানা বর্ষণের কারণে তলিয়ে গেছে বাংলাহিলি পাইলটস্কুল, হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্লাস রুমে পনি ঢুকে পড়ায় ছুটি দেওয়া হয়েছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বৃষ্টির কারণে হিলির চারমাথা,চন্ডিপুর, ফকিরপাড়া, মাঠপাড়া, টিঅ্যান্ডটি সড়ক, স্বর্ণপট্টি এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাকিমপুর পৌরসভার চন্ডিপুর, ফকিড়পাড়া, মাঠপাড়া, মুন্সিপাড়া ও কালিগঞ্জ এলাকার প্রায় ১৪ হাজার মানুষ। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে আশেপাশের ক্লাবগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। বাড়িঘর ও দোকানপাট ডুবে গেছে।যে কারণে এ এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যসহ অফিস বন্ধ রয়েছে।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. শামীমা নাজনিন জানান, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ৫০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধান ক্ষেত দুই-তিন পানিতে তলিয়ে থাকলে তেমন কোনও ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে এ পানি বেশি দিন থাকলে ধানক্ষেতের ক্ষতি হতে পারে।
হাকিমপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে হাকিমপুর উপজেলার ছোট বড় প্রায় ৪৪৫টির মতো পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এর ফলে প্রায় ২৬৭ টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে। মৎস্য খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
হাকিমপুর পৌরসভার মেয়র মো.জামিল হোসেন চলন্ত জানান, চার দিনের টানা বৃষ্টিতে হাকিমপুর পৌরসভার প্রায় প্রতিটি সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এর ফলে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে যেমন আমদানি রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে তেমনি পৌরসভার প্রায় ১৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে হিলি স্থলবন্দরের উন্নয়নের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সরকার যদি হিলি স্থলবন্দরের দিকে নজড় দিয়ে এর বরাদ্দ একটু বাড়িয়ে দেন তাহলে এই জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব। এর আগে হাকিমপুর পৌরসভার কোনও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল না। আমাদের পরিষদ ক্ষমতায় আসার পর ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শুরু করেছি।
/জেবি/
আরও পড়তে পারেন: তুফান কাণ্ড’ আমাদের লজ্জায় ফেলেছে: বগুড়ায় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান