বগুড়ার ধুনটের কয়েকটি গ্রামে নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির নামে পোস্টারিং করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর সর্বহারা পার্টির নামে এ তৎপরতায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে কে বা কারা পোস্টারিং করেছে সে সম্পর্কে এলাকাবাসী কিছু বলতে পারেননি।
শনিবার (৭ অক্টোবর) বিকালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী ভুঁইয়া পোস্টার দেখার পর মথুরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ সেলিমকে বিষয়টি জানান। চেয়ারম্যান পরে ধুনট থানার ওসি মিজানুর রহমানকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ রাতেই পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ও ধুনট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মথুরাপুর গ্রামে এবং উলিপুর গ্রাম থেকে শিমুলকান্দি গ্রাম পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির নামে পোস্টারিং করা হয়। সড়কের দুই পাশের গাছ, ঘরের বেড়া ও স্কুলের নামফলকে পোস্টারগুলো দেখা যায়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নামে প্রচারিত ওই পোস্টারে তাদের চতুর্থ জাতীয় কংগ্রেসের আহ্বান জানানো হয়।
সর্বহারা পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির নামে প্রেসে লাল কালিতে ছাপানো ওইসব পোস্টারে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী বিভিন্ন উক্তি এবং শোষণ ও শ্রেণিহীন বিশ্বসমাজ এবং সমাজতন্ত্র কায়েমে মার্কসবাদ, লেলিনবাদ, মাওবাদের মতামতকে আঁকড়ে ধরতে বলা হয়েছে।
মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আলতাব আলী শেখ জানান, আশির দশকে এই এলাকায় সর্বহারা পার্টির ব্যাপক তৎপরতা ছিল। সে সময় সর্বহারা পার্টির অস্ত্রধারীরা উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে ধুনট উপজেলার তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান খাদুলী গ্রামের হাফিজুর রহমান দুদু, স্কুল শিক্ষক নূরুল ইসলাম ও সরকারি দুই কর্মকর্তাকে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করেছিল। এছাড়া ১৯৮৮ সালে মথুরাপুর হাটে প্রকাশ্য দিবালোকে ধেরুয়াহাটি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানকে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এরা ছাড়াও ১০-১২ জন প্রভাবশালী লোক সর্বহারাদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। পরবর্তীতে স্থানীয় পীরহাটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের পর সর্বহারা পার্টির তৎপরতা কমে যায়। জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে।
মথুরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ সেলিম বলেন, ‘কয়েক বছর আগে মাঝে মাঝে সর্বহারা পার্টির নামে হাতে লেখা পোস্টার লাগানো হতো। পুলিশ সেই পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলতো। তবে এবার প্রেসে ছাপানো লাল কালিতে পোস্টারিং করায় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।’ তিনি আরও জানান, এলাকায় কোনও পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি।
ধুনট থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ উপজেলায় সর্বহারা পার্টির কোনও অস্তিত্ব নেই। দুষ্ট লোকজন এ পোস্টার লাগিয়ে থাকতে পারে। এরপরও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।’
আরও পড়ুন- সাথীকে আত্মহত্যার প্ররোচণা মামলা: এখনও গ্রেফতার হয়নি ইয়ামিন ও তার বাবা আমিনুর