সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে তার দলের সদস্য এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ওই ছাত্রীর মামা বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। একইসঙ্গে ধর্ষণে সহযোগিতা ও মারপিটের অভিযোগে তার আরও পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে বেলকুচির এই ঘটনায় স্থানীয় থানা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠায় সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শহিদুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিকেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের এপিপি অ্যাড. আনোয়ার পারভেজ লিমন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে ওই আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী বেলকুচির একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সে একইসঙ্গে ওই স্কুল শাখা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি।
মামলার আসামিরা হলেন- জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বেলকুচির চরখাষিয়া গ্রামের রকিব উদ্দিন মাস্টারের ছেলে রিয়াদ হোসেন (২৫), একই উপজেলার চরচালা গ্রামের মিন্টু কসাইয়ের ছেলে আরমান হোসেন (২৬), একই গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে আল-আমিন হোসেন ও মৃত সোনা উল্লাহ’র ছেলে রুবেল শেখ, কলাগাছি গ্রামের মমিন শেখের ছেলে রতন শেখ ওরফে পিচ্চি রতন (২৪) এবং গাড়ামাসি গ্রামের নিমাই ডাক্তারের ছেলে পাপ্পু।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ৭/৮ মাস আগে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ হোসেন স্কুল কমিটি গঠনের জন্য আসলে ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয়। স্কুল কমিটিতে ওই ছাত্রীকে সিনিয়র সহ-সভাপতির পদও দেওয়া হয়। এ সূত্র ধরেই উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে রিয়াদ। তবে স্কুলছাত্রীর পক্ষ থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রিয়াদ টালবাহানা শুরু করে। বিষয়টি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দিলে রিয়াদ ওই ছাত্রীকে মারপিট করে। খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে রিয়াদের পাঁচ সহযোগীও মেয়েটিকে মারপিট করে। তারা সাদা কাগজে স্কুলছাত্রীর স্বাক্ষর নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয়।
এজাহারে আরও জানানো হয়, এরপর ওই শিক্ষার্থী তার স্বজনদের বিষয়টি জানায়। তারা বাবাকে নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে যায়। এ সংবাদ পেয়ে অভিযুক্তরা থানায় গিয়ে পুলিশের সামনে আবারও ওই শিক্ষার্থীকে মারপিট করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে আবারও সাদা কাগজে বাবা-মেয়ের স্বাক্ষর নিয়ে তাদের থানা থেকে বের করে দেয়। এ কারণেই তারা আদালতে মামলা করেছেন।
প্রেম ও ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ হোসেন মঙ্গলবার বিকালে মোবাইল ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই মেয়েটি ১৩ অক্টোবর রাতের বেলায় হঠাৎ আমার মেসে প্রবেশ করে ঘরের দরজা আটকে আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে মেস থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর সে থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। তথ্য-প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন তাকে বিদায় করে দেন। আসন্ন বেলকুচি উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে আমি সভাপতি পদের প্রার্থী। যে কারণে প্রতিপক্ষ ওই মেয়েকে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে বেলকুচি থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ওই মেয়েটি অভিযোগ করার জন্য থানায় এসেছিল। কিন্তু তার বাবা মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তারা চলে যান। ওই সময় থানায় কোনও মারপিটের ঘটনা ঘটেনি। সাদা কাগজেও কোনও স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম লিমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার বিষয়টি এখনও জানি না। তবে এরকম সংশ্লিষ্ট ছাত্রলীগ নেতা এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এমন ঘটনায় প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। এর আগেও এরকম ঘটনায় কয়েকজনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে রাতেই আমি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানাবো।’
আরও পড়ুন- রাবিতে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের মিছিল অব্যাহত
