স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ ও ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কারণেই আওয়ামী লীগ নেত্রী স্বপ্না আক্তারকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবাসী। তবে বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত চলছে বলে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নিহতের বড় বোন চম্পা আক্তার জানান, তার বোন নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং যুবদলের নেতাকর্মীরা ঈর্ষান্বিত হয়ে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ এলাকার যেকোনও কাজ-কর্মে বাধা দিয়ে আসছিল। স্থানীয় জিনদপুর বাজার কমিটির নেতা নির্বাচন নিয়েও স্বপ্নার সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল। এসব বিরোধের জেরেই স্বপ্নাকে খুন করা হয়েছে।
নিহত স্বপ্নার স্বামী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরেই আমার স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর আগেও ইউনিয়ন নির্বাচনের বিরোধ নিয়ে স্বপ্নার ওপর কয়েকবার হামলা করেছিল দুর্বৃত্তরা। গতকাল তারা স্বপ্নাকে আর রেহাই দেয়নি।’ তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
স্বপ্নার একমাত্র ছেলে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ইফরান হোসেন জানায়, তার মাকে এলাকার লোকজনই হত্যা করেছে। এরা তার মাকে আগেও হত্যার চেষ্টা করেছিল।
ইফরান বলে, ‘পুলিশের কাছে তাদের নাম বলেছি। তাদের ধরলে আমার মায়ের খুনি বের হয়ে যাবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট শিব শংকর দাস বলেন, ‘স্বপ্না সব সময় ন্যায়ের পক্ষে থাকতেন। ন্যায়পরায়ণতাই তার জীবনে কাল হয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা রমজান মিয়া ও আলী আকবর জানান, স্বপ্না ব্যক্তিগত জীবনে ভাল মানুষ ছিলেন। তারা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
এদিকে, হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুহম্মদ মুস্তফা আশরাফ জানান, নিহত স্বপ্নার আক্তারের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। মাথায় বুলেটের আঘাতেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, স্থানীয় রাজনীতি, বাজার কমিটির বিরোধসহ একাধিক বিষয় মাথায় রেখে তারা কাজ করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলার আসামিদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২২ নভেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে উপজেলার জিনোদপুর ইউনিয়নের দশমৌজা বাজারে ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে বাড়িতে ফিরছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক স্বপ্না আক্তার। বাড়ির কাছে জিনদপুর চারপাড়া সড়কের মাঝামাঝি স্থানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা অটোরিকশার গতিরোধ করে খুব কাছ থেকে স্বপ্নাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গভীর রাতে নিহতের ছোট ভাই আমীর হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার পর জাহাঙ্গীর নামে এক অটোরিকশাচালককে আটক করে পুলিশ।