X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁস: উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

তরিকুল রিয়াজ, বরগুনা
১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:৩১আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:৩১

 

বরগুনায় দ্বিতীয় শ্রেণির প্রশ্নপত্র ফাঁস বরগুনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তাদের প্রশ্ন কিভাবে প্রাথমিকের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়? কে এ কাজে জড়িত? প্রশাসন জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? চলতি মাসে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তবে প্রশাসনের দাবি দ্রুত প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে, একেরপর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেছেন অভিভাকরা। অনেকে মনে করেন এভাবে সরকারি বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে শিক্ষর্থীদের কিন্ডারগার্টেনে পড়ানোর আগ্রহ বাড়বে।

দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এমন করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আমরা হতাশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁস করে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ধংস করার পায়তারা করছেন। অসৎ ও লোভী শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে তাদের সফল্য দেখানোর জন্য এই জঘণ্য কাজ করছেন।’

মো. হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁস হলে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? এমন করে প্রশ্ন ফাঁস হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে। এতে শিশুরা পলেখাপড়ায় ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে। ফলে আমরা সন্তানের ভবিষৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি।’

এছাড়াও একাধিক অভিবাবক মনে করেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের জঘণ্য কাজ করার সাহস কেউ না পায় সে ব্যবস্থা করা উচিত।

এদিকে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বরগুনার সচেতন নাগরিক সমাজ। তারা এ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে। আমরা আমাদের আগামীর ভবিষৎ জাতিকে একটি মেধাশুন্য জাতিতে পরিণত করে ফেলছি। তাই আমাদের এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিৎ।’

বরগুনায় দ্বিতীয় শ্রেণির প্রশ্নপত্র ফাঁস বরগুনার বেতাগী উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ. মন্নান বলেন, ‘অপরাধ যে করেছে তার শাস্তি হোক এটা আমরা চাই। নৈতিকতা যারা বিকিয়ে দিতে পারে তারাই এমন কাজ করে। তবে তদন্তের মাধ্যমে দোষীকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

বরগুনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আ. মজিদ বলন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আমরা সম্পূর্ণ নতুন প্রশ্নে পরীক্ষগুলো নেবো। একই সঙ্গে বরগুনা সদর উপজেলার ঘটনায় একজন শিক্ষককে সাময়িক বরখস্ত করা হয়েছে। বেতাগীতে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত চলছে। দুটো ঘটনাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা উদঘাটনের জন্য তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। ইতোমধ্যে একজন শিক্ষককের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে কোনও প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। আমার অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।’

প্রসঙ্গত, গত ৯ ডিসেম্বর শনিবার বরগুনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম ও ৯ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। পরে ওই বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করে নির্ধারিত সময়ের (সকাল ১০টা) তিন ঘণ্টা পরে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নতুন প্রশ্ন করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ ঘটনায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে ওই বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ভূগল বিষয়ের শিক্ষক মো. বাবুল আক্তার এবং ভৌত বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ননী গোপাল দু’জনই শিক্ষার্থীদের গণিত প্রাইভেট পড়ান। অভিযোগ আছে তারা প্রাইভেট ছাত্রীদের কাছে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন।

গত ১১ ডিসেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি পরীক্ষার চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। বিষয়টি জেলা প্রশাসন আমলে নিয়ে শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বর বরগুনা সদর উপজেলার ২৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।  এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা হলেন- বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মো. মাহবুবুল আলম ও বরগুনা প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম। এ ঘটনায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে আয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম সরোয়ার ননীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে হাজির করা হলে আদালত তাকে জামিন দেন।

সর্বশেষ বরগুনার বেতাগী উপজেলায় দ্বিতীয় শ্রেণির গণিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় উপজেলার ১৪০টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।

আরও পড়ুন:
এবার দ্বিতীয় শ্রেণির প্রশ্ন ফাঁস: বেতাগীর ১৪০ স্কুলে পরীক্ষা স্থগিত

/এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা