X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরগুনায় ১০ জেলে পরিবারের মানবেতর জীবন

তরিকুল রিয়াজ, বরগুনা
২৩ মার্চ ২০১৮, ১২:৪৫আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৮, ১৫:৫০

রানী বেগম ও তার বাবা শামসুল হক চার বছর ধরে ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছি। সাংবাদিকরা প্রতিবছর এসে মনের ক্ষতকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তারপরও সাংবাদিকরা খোঁজ নেন। আর কেউ আসেনও না, খোঁজও নেন না। বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এই আক্ষেপ জানান বরগুনার পাথরঘাটার রানী বেগম। তার মতো আরও ৯টি জেলে পরিবারেরও একই আক্ষেপ। তাদের দাবি, তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

২০১৪ সালে সাগরে এফবি আনোয়ারা নামের ট্রলারডুবির ঘটনায় বরগুনা জেলার ১৩ জেলে নিখোঁজ হন। তিন জেলেকে অন্য একটি ট্রলার তীরে নিয়ে ফিরলেও এখনও ফেরেননি ১০ জেলে। সেই ট্রলারে রানী বেগমের স্বামী ইসমাইল ফরাজী, বড় ছেলে শহিদুল ও মেজ ছেলে সাইফুল ছিলেন। চার বছরেও কোনও খোঁজ মেলেনি তাদের। একই ট্রলারে থাকা জ্ঞানপাড়া গ্রামের সুলতান হাওলাদার ও চাঁন মিয়াও নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের মধ্যে জ্ঞানপাড়া গ্রামের পাঁচজন, মঠের খালের একজন, তালতলী উপজেলার একজন ও অন্য তিনজন পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের।

রানী বেগম বলেন, ‘স্বামী ও দুই সন্তান হারিয়েছি চার বছর। কিন্তু, সরকারের কোনও সহযোগিতা আজও পাইনি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও কোনও ভাতা পাচ্ছি না। বৃদ্ধ বাবা ও মাকে নিয়ে স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটায় থাকছি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।’

রানী বেগমের আরেক ছেলে রফিকুল মানসিক ভারসাম্যহীন। আর মেয়ে রাহিমা ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে।

জ্ঞানপাড়া গ্রামের নিখোঁজ জেলে সুলতান হাওলাদারের বৃদ্ধ বাবা হাবিবুর রহমান প্যারালাইসিস রোগী। মা রিনা বেগমও ভুগছেন বিভিন্ন রোগে। সুলতান হাওলাদারের স্ত্রী মোসা. হনুফা বেগম বলেন, ‘স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর সংসার চালাতে গিয়ে মানুষের দুয়ারে-দুয়ারে ঘুরতে হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে শিশু ছেলেকে কাজে দিয়েছি। আমি অন্য লোকের বাড়িতে ও ক্ষেতে কাজ করে কোনও রকমে খাবার জোগাড় করি। ঘরে অসুস্থ শ্বশুর ও শাশুড়ি রয়েছে।’

নিখোঁজ জেলে সুলতান হাওলাদারের স্ত্রী হনুফা বেগম হনুফা আরও বলেন, ‘কোনও মেম্বার চেয়ারম্যান আমাদের সহায়তা করেনি। পাশের বাড়ির মানুষ চাল পায়, টাকা পায়। অথচ আমরা কিছুই পাই না।’

একই গ্রামের চাঁন মিয়ার স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, ‘ঘরে বৃদ্ধ মা ও দুই সন্তান। মানুষের বাড়িতে বা ফসলি ক্ষেতে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চলছে।’

হাসিনা বেগম বলেন, ‘কী আর করবো। কেউ কোনও সহযোগিতা করে না। সরকারিভাবেও কিছু পাইনি। তাই সংগ্রাম করেই জীবন চালাই। বড় ছেলেটা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আর ছোট ছেলেটা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।’

চরদুয়ানি ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. মজিবর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘জেলেরা সাগরে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছে। তারা মৃত কিনা, তাও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। মৃত না হলে তাদের স্ত্রীদের বিধবাও বলা যাচ্ছে না। নিখোঁজ জেলেদের মৃত সনদ না দিলে কোনোভাবেই তাদের স্ত্রীদের বিধবা ভাতাও দেওয়া যাচ্ছে না।’

নিখোঁজ জেলে চাঁন মিয়ার স্ত্রী হাসিনা বেগম বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘এটি ২০১৪ সালের ঘটনা। জেলেরা সাগরে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছে। বেঁচে আছে কিনা তাও কেউ বলতে পারে না। তাদের পরিবারগুলো কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এসব পরিবারকে ভিজিডি ও ভিজিএফের আওতায় নিয়ে আসতে।’

এফবি আনোয়ারা  ট্রলারটির মালিক পাথরঘাটার মো. হারুন ফরাজী।

/এনআই/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মোংলা বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ আসার নতুন রেকর্ড
মোংলা বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ আসার নতুন রেকর্ড
হামাসকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
হামাসকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
প্রবীণ সাংবাদিক জিয়াউল হকের মৃত্যু
প্রবীণ সাংবাদিক জিয়াউল হকের মৃত্যু
‘লাকি সেভেন’ জার্সি ফিরে পেয়ে খুশি সানজিদা
‘লাকি সেভেন’ জার্সি ফিরে পেয়ে খুশি সানজিদা
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?