স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আর এই অর্জনের পটভূমিতে এবার ভিন্ন আঙ্গিকে যথাযথ মর্যাদায় সারাদেশে পালিত হচ্ছে ৪৮তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। সকাল ৮টায় সারাদেশে একযোগে গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ ও শিশু কিশোরদের শরীর চর্চা প্রদর্শন করা হয়। আয়োজন করা হয় বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সাভার প্রতিনিধি জানান, সোমবার ভোর থেকে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও ৫ টা ৫২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিসৌধের ভেতরে প্রবেশ করেন। এর কিছু সময় পরই তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর জনসাধারনের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ভোলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্বা জানানো হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক প্রথম পুস্পমাল্য দিয়ে শহীদের প্রতি সম্মান জানান। তারপর পুলিশ সুপার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো শ্রদ্ধা জানায়। সকাল ৮টায় ভোলা গজনবী স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ ও শিশু কিশোরদের শরীর চর্চা প্রদর্শন এবং বিভিন্ন ডিসপ্লে প্রর্দশন করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, জেলার ফরুকী পার্কের কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার মো. সুপার মিজানুর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের সাধারন মানুষ।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচি ও সমবেত জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে নীলফামারীতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, মহানগরীর পাটগুদাম কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। পরে বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন, রেঞ্জ ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি, জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার লসয়দ নুরুল ইসলাম, জিলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
লক্ষীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভোর ৬টা ১ মিনিটে লক্ষ্মীপুর কালেক্টরেট ভবন প্রাঙ্গনে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিফলকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহাজান, পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। পরে শহরের বাগবাড়ীর গণকবরে শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, সকালে দশানীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন জেলা আওয়ামী লীগ, বাগেরহাট প্রেসক্লাব ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। সকাল ৮টায় বাগেরহাট শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, পুলিশ, আনসার, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট দলের সদস্যরা মার্চ পাস্টের মাধ্যমে জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। এই সময় মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশা, জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলা শহর মাইজদীতে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব আলম তালুকদার ও পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ। এছাড়া নোয়াখালী প্রেসক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদ, ছাত্রলীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জেলা পরিষদ, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল, নার্সিং ট্রেনিং ইনিস্টিটিউটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সকাল ৮টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় পুলিশ, আসনার, বিএনসিসি, স্কাউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শনী।
এরপর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলার ৯টি উপজেলায়ও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জেলা প্রাশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার। এরপর পুলিশ প্রশাসন, জেলা পরিষদ, জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পরে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
হিলি প্রতিনিধি জানান, রবিবার সকালে হিলির মুহাড়াপাড়ায় শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত সন্মুখ সমরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। পরে উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, হিলিপোর্ট, পৌরসভা, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সন্মুখ সমরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সকাল ৮টায় হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়া এবং পায়রা উড়ানোর মাধ্যমে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেন হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন মন্ডল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. শুকরিয়া পারভিন।
ইবি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবন চত্বরে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী এবং বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আব্দুল লতিফ।