খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের আয় আগের চেয়ে কমেছে। নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী, ২০১৩ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে তার আয় প্রায় পাঁচগুণ কমেছে। এদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু তার হলফনামায় দেখিয়েছেন তার বার্ষিক আয় বেড়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বাড়িভাড়া থেকে আয় বেড়েছে তার। তবে প্রধান দুই প্রার্থীই দেখিয়েছেন, নিজের চেয়ে তাদের স্ত্রীদের নগদ অর্থ বেশি। খালেকের হলফনামায় তার চেয়ে স্ত্রীর নামে নগদ অর্থ ২১ গুণ বেশি রয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। আর মঞ্জুর চেয়ে তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৯ গুণ বেশি নগদ অর্থ।
এবারের নির্বাচনি হলফনামায় তালুকদার আব্দুল খালেকের বার্ষিক আয় দেখানো হয়ছে ৪১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫৫ টাকা। ২০১৩ সালের হলফনামায় তার আয় ছিল ৪ কোটি ৬২ লাখ ৫৫ হাজার ৬০০ টাকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার। নতুন হলফনামা অনুযায়ী খালেকের বার্ষিক আয় কৃষিখাত থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, মৎস্যঘের খাত থেকে ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩০০ টাকা, ব্যাংক সুদ খাত থেকে ৮ লাখ ৫১ হাজার ৫৮০ টাকা, সংসদ সদস্য হিসেবে পারিতোষিক ও প্রাপ্ত ভাতা খাত থেকে বার্ষিক ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৭৫ টাকা।
খালেকের হলফনামায় নিজের নামের চেয়ে স্ত্রী নামে নগদ অর্থ ২১ গুণ বেশি রয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। মৎস্যঘের ব্যবসায়ী সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের নগদ অর্থ রয়েছে ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকা। আর স্ত্রীর নামে নগদ অর্থ দেখানো হয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৭৯৪ টাকা। কোনও মামলায় অভিযুক্ত না হলেও ৯টি মামলা ছিল তার বিরুদ্ধে, এরইমধ্যে সবক’টিতেই অব্যাহতি ও খালাস পেয়েছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনে তালুকদার আব্দুল খালেকের জমা দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, খালেকের নামে তিনটি ব্যাংকে জমা আছে ২ কোটি ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৬১৬ টাকা। আর স্ত্রীর নামে দুটি ব্যাংকে আছে ২০ লাখ ৪৪ হাজার ৭০৪ টাকা। এছাড়া এসবিএসি ব্যাংকে ২ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। নিজের ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং স্ত্রীর ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, নিজের ১০ লাখ টাকার এফডিআর এবং স্ত্রীর ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৪৯ টাকার এফডিআর ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর রয়েছে।
স্বামী-স্ত্রীর গাড়ি রয়েছে তিনটি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে পৈতৃক কৃষি জমি রয়েছে ২৩ বিঘা। অকৃষি জমি ও পাঁচতলা বাড়ির অংশবিশেষ রয়েছে তার। এছাড়া মৎস্যঘেরে বিনিয়োগ রয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৯০০ টাকা। নগরীর ৩৩নং মুন্সীপাড়া ৩ নম্বর গলির বাসাটি বর্তমান ঠিকানা দেখালেও বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিকের বেড় নিজ জন্মস্থানকে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আর তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর আগে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, আর ব্যয় ছিল ১ লাখ টাকা। ওই নির্বাচনের সময় তার আয় উৎস ছিল ব্যবসা। এবারও হলফনামায় পেশা ব্যবসা দেখানো হলেও বর্তমানে ব্যবসা বন্ধ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন তার আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে বাড়িভাড়া। এছাড়া নিজের চেয়ে স্ত্রীর নামে ১৯ গুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) নগদ রয়েছে।
কেসিসি নির্বাচন উপলক্ষে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী ১২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র দাখিল পর্যন্ত মঞ্জুর অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ ৩ লাখ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে ৮৯০ ডলার। তার স্ত্রীর নগদ ২ লাখ টাকা এবং ১৭ হাজার ৪৫৪.৩২ ডলার। এছাড়া একটি টয়োটা জিপ (মোটরগাড়ি), ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে একটি টিভি ও একটি ফ্রিজ। আসবাবপত্রের মধ্যে দুটি সোফাসেট ও দুটি আলমারি। তার স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। যৌথ মালিকানায় চারতলা ভবন রয়েছে। এটিতে মঞ্জুর অংশ ২/৭। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন খুলনা অফিস থেকে তার বাবা আব্দুল হালিম ৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। বাবার মৃত্যু পর থেকে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে।
মঞ্জুর শিক্ষাগত যোগ্যতা আইনে স্নাতক পাস। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ৪টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এছাড়া খুলনা থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা আগের ৩টি মামলার একটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন। আর দুটি মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- খুলনায় জনপ্রিয়তা প্রমাণের লড়াই আ.লীগ-বিএনপির