বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি সুবর্ণা আক্তার নদী হত্যার ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে তার সাবেক স্বামী রাজীব হোসেন ও শ্বশুর আবুল হোসেনকে। আহত অবস্থায় সবুর্ণা তার মাকে বলেন, ‘রাজীব ও তার সহকারী মিলনসহ কয়েকজন আমাকে কুপিয়েছে।’
সুবর্ণার মা মর্জিনা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, "আহত মেয়েকে নিয়ে আমি হাসপাতালে যাই। হাসপাতালে যাওয়ার পথে সে আমাকে হামলাকারীদের নাম বলে। 'সে বলে, রাজীব ও তার সহকারী মিলনসহ কয়েকজন তাকে কুপিয়েছে। আমি তাদের চিনতে পেরেছি। আমি তাদের ফাঁসি চাই।"
স্বামী ও শ্বশুরের পাশাপাশি সুবর্ণা যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তার কেয়ারটেকারকেও সন্দেহ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাতে সুবর্ণার শ্বশুর ও কেয়ারটেকার ইমরান হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তবে রাজীব এখনও পলাতক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজীবের বিরুদ্ধে গত বছর একটি যৌতুক মামলা করেছিলেন সুবর্ণা। মামলা নং-সিআর ২৯৭/১৭ (পাবনা)। মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ছিল। এদিন সাক্ষ্য দেন সুবর্ণার বড় বোন চম্পা বেগম। সাক্ষ্য রাজীবের বিপক্ষে যাওয়ায় তাদের সঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে বাকবিতণ্ডা হয়। তারপর সুবর্ণা তার অফিসে যায় এবং রাতে কাজ শেষে বাড়ির গেটে ঢোকামাত্রই ৩/৪ জন দুর্বৃত্ত এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় সুবর্ণাকে উদ্ধার করে তার মা পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বড় বোন চম্পা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) সকালে আমার বোনের যৌতুক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ছিল। আমার সাক্ষ্য আসামির বিপক্ষে যাওয়ায় রাজীব ও তার সহযোগীরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। একপর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমরা তখন সেখান থেকে বাড়িতে চলে আসি।’
বাড়ির কেয়ারটেকার ইমরান হোসেনের ছোট ভাই মেহেদি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ভাই এই বাড়ির কেয়ারটেকার। ঘটনার সময় আমার ভাই বাড়ি ছিলেন না। পরে খবর পেয়ে ভয়ে বাড়ি ফেরেন নাই। রাত আড়াইটার দিকে বাড়ি এলে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এবং সঙ্গে তার আরও কয়েকজন বন্ধুকে ধরেছে।’
আবুল হোসেনের মালিকানাধীন শিমলা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, ‘রাতেই আমাদের মালিক আবুল হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।’
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনও মামলা হয়নি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আমরা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। তবে খুব শিগগিরই আমরা মূল হোতাদের শনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।’
আরও পড়ুন:
পাবনায় নারী সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা