‘গত পরশু দিনও অফিস শেষ করে ছেলে আমাকে মোবাইলফোনে জিজ্ঞেস করেছে, মা তুমি ওষুধ খেয়েছো? তুমি হাই প্রেসারের রোগী, সময় মতো ওষুধ খাবা। আব্বার শরীরের অবস্থা কি? কিন্তু, এখন আর কে বলবে, মা তুমি ওষুধ খেয়েছো।’
ঢাকার বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুনে মারা যাওয়া ইকতিয়ার হোসেন মিঠুর (৩৭) মা রেখা খাতুন এভাবে বিলাপ করেন। মিঠুর বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চর বানিয়াপাড়া গ্রামে। বাবার নাম ইসহাক আলী।
রেখা খাতুন বলেন, ‘কাল যখন আগুন ধরে কত দোয়া করেছি। আমার ছেলের এতো তাড়াতাড়ি পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়ে গেলো! মিঠু আমার বড় সন্তান, তাকে ছেড়ে কি করে থাকবো। আমার মিঠুর ছেলেটা এতিম হয়ে গেলো। বাবা ছাড়া সে কীভাবে থাকবে!’
ঢাকার বনানীর এফ আর টাওয়ারে ফ্লোগাল নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির সিনিয়র হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ইকতিয়ার হোসেন মিঠু। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে মিঠুই পরিবারের বড় ছেলে। মিঠুর বাবা ইসহাক আলী কাপড় ব্যবসায়ী। কয়েক বছর আগে স্ট্রোক করার পর কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন।
মিঠুর স্ত্রী ও মিত্তাউল হোসেন মুগ্ধ নামে তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে।
মিঠুর ছোট ভাই ইমন বলেন, ‘বড় ভাইয়ের সঙ্গে আমি ঢাকাতেই থাকি। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ আমাকে ফোন করে জানায়, তার কর্মস্থল এফ আর টাওয়ারে আগুন ধরেছে। ১২ তলায় সে নিরাপদে আছে। পরে ১টা ৫৭ মিনিটে বলে আমার জন্য দোয়া করো, অবস্থা ভালো না। এরপর থেকে তার মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আমি ঘটনাস্থল গিয়ে তাকে খোঁজ করি। এরপর ঢাকা মেডিক্যালে মর্গে তার লাশ পাই।’
স্মৃতিচারণ করে ইমন বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে আমি যখন বাসা থেকে বের হই, তখনও সে বলেছে পথে সাবধানে যাবি। কাজ শেষে সময় মতো বাসায় চলে অসবি। জীবিত ভাইটি লাশ হয়ে ফিরবে কখনও ভাবিনি।’
চাচা মুকাদ্দেস আলী মিঠুর সংসারের প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
শক্রবার বাদ জুমা নামাজে জানাজার পর চর বানিয়াপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এছাড়া, আগুনে ৫৯ জন আহত ও অসুস্থ হয়ে রাজধানীর আটটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:
ঈদে বাড়িতে আসার কথা ছিল রুমকি-মাকসুদার
নিজেদের নিরাপত্তায় আমাদের ৫ করণীয়