X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোটা ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা চান পাটকল শ্রমিকরা (ভিডিও)

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
০৪ এপ্রিল ২০১৯, ২৩:৫৩আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০৩

খুলনায় পাটকল শ্রমিকরা (ছবি: ফোকাস বাংলা) পাটকল শ্রমিকরা শুধু মোটা ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা চান বলে মন্তব্য ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেনের। সেজন্যই তারা আন্দোলন করছেন। তার অভিযোগ, পাট কেনার জন্য মৌসুমে অর্থ বরাদ্দ না হওয়া, ক্ষুদ্র বিষয়ে তদন্ত করার নামে বিজেএমসি থেকে বড় বড় পদে লোক নিয়োগ ও কার্যক্রমের নামে তহবিল থেকে কোটি টাকা ব্যয় এবং বিজেএমসি ফুটবল টিম পরিচালনার নামে বিদেশি খেলোয়াড় দেশে এনে কোটি টাকা খরচের কারণে বকেয়া পড়ছে তাদের মজুরি।

এবার ১৩ মার্চ শুরু হয় আন্দোলন। শুক্রবার ভোর ৬টায় শেষ হচ্ছে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট। ২০১৭ সালেও একই দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। এভাবে প্রায় প্রতি বছরই আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকদের প্রাণের দাবির স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও সার্বিক সেবা) মো. শামীম রেজা খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খুলনার পাটকল শ্রমিক নেতাদের করপোরেশনের অফিসে শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় ডাকা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে শুনে সমস্যার সমাধান করা হবে।’

ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, ‘শ্রমিক সংগঠন সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আন্দোলন চলে আসছে। তবে, এ আন্দোলন হয় একেক সময় একেক ইস্যুতে। সমস্যা জিইয়ে থাকার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে নীতি-নির্ধারক কর্তৃক সুষ্ঠু পরিকল্পনা না নেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও নানা অনিয়ম। মৌসুমেই পাট কেনার অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে সাশ্রয়ী দামে ভালো পাট দেখে-শুনে মিলগুলো কিনতে পারে। যা জুন-জুলাই মাসে বরাদ্দ হওয়া দরকার। কিন্তু, এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় মার্চ-এপ্রিলে। যখন পাট কিনতে মণ প্রতি ৮শ থেকে ১২শ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়। আর ভালো পাটও পাওয়া যায় না। মিলগুলো তখন উৎপাদন চালু রাখার স্বার্থে নিম্নমানের পাট বেশি দামে কিনতে বাধ্য হয়। এ কারণে পাটখাতে ঋণ নেওয়া মিলগুলোও পড়ে অর্থ সংকটে। ’

মুরাদ হোসেন পাটকল শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সম্পাদক ও খুলনা যশোর আঞ্চলিক কমিটিরও আহ্বায়ক। তার মন্তব্য, পাটখাতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৭ ভাগ। এ হারে ঋণ নিয়ে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির পর ব্যাংক কেটে নেয় ২৫ ভাগ ও বিজেএমসি কেটে নেয় ৫ ভাগ। ১ কোটি টাকার পাটপণ্য বিক্রির পর এভাবে কেটে নেওয়া শেষে মিল পায় ১০ লাখ টাকার মত। যা দিয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-মজুরি দেবে, নাকি মিলের যন্ত্রপাতি মেরামত করবে?

মুরাদ হোসেনের দাবি, এ সমস্যার সমাধান মৌসুমে পাটখাতে অর্থ বরাদ্দ ছাড়া সম্ভব না।

তার অভিযোগ, কোনও মিলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তদন্ত করার নামে বিজেএমসি থেকে বড় বড় পদে লোক নিয়োগ ও কার্যক্রমের নামে তহবিল থেকে কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। পরবর্তীতে ওই টাকার চাপ এসে পড়ে মিলের ওপর। যা শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরিতে ঘাটতি তৈরি করে। বিজেএমসি ফুটবল টিম পরিচালনার নামে বিদেশি খেলোয়াড় দেশে এনে কোটি টাকা খরচ করে। আর এ চাপও এসে পড়ে মিলগুলোর ওপর। আর মিলগুলো শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি ও বেতন বকেয়া রেখে বিজেএমসির চাহিদা পূরণে বাধ্য হয়। এগুলো দূর করতে না পারলে শ্রমিকদের নিয়মিতভাবেই রুটি রুজির জন্য আন্দোলন করতে হবে। শ্রমিকরা বাড়ি-গাড়ি করতে চায় না। শ্রমিকরা চায় মোটা কাপড় ও মোটা ভাতের নিশ্চয়তা।

সমস্যার সমাধান করতে হলে সরকার, সাংবাদিক, নাগরিক নেতৃবৃন্দ, সিবিএ নেতা, অর্থ মন্ত্রণালয়, ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ দায়িত্বশীলদের সমন্বিত বৈঠক ও আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব করেন ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন।

খুলনায় পাটকল শ্রমিকরা (ছবি: ফোকাস বাংলা) খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান গাজী শাহাদত হোসেন বলেন, ‘পাট মৌসুমে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে মিলগুলোতে অর্থ ও কাঁচা পাটের সংকট লাঘব হবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদিত পাটপণ্যে বেশি লাভ করা সম্ভব হবে। আর তা হলে শ্রমিকরা নিয়মিত মজুরি পাবে। আর এভাবে চলতে থাকার কারণে মজুরি বকেয়া পড়ায় শ্রমিকরা অশান্ত হচ্ছে। আমি নিজেও ৩ মাসের বেতন পাচ্ছি না। পরিকল্পনা করেন সংশ্লিষ্টরা। আমরা শুধু ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করি। ব্যাংক ঋণ নেওয়ার সময় চুক্তি হয়। ব্যাংক চুক্তি অনুযায়ীই সুদ নেয়। বেশি নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আর বেশি সুদ নেওয়ার সুযোগও নেই। এটা ঠিক, পাটপণ্য বিক্রির পর প্রাপ্ত লাভের অর্থ দিয়ে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া নিয়ে সংকট তৈরি হয়। আবার মিলের যন্ত্রপাতিও মেরামত করার অর্থ থাকে না। মেশিনগুলো ৫০ এর দশকের। যা, রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। কিন্তু, অর্থ সংকটের কারণে তাও সম্ভব হয় না।’

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) খুলনা যশোর আঞ্চলিক লিয়াজো কর্মকর্তা শঙ্কর ভুইয়া বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনের সমাধান নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বিজেএমসি আলোচনা করছে। শনিবারের বৈঠকে একটা সুষ্ঠু সমাধান হতে পারে।  ৩শ কোটি টাকার উৎপাদিত পাটপণ্য মজুদ রয়েছে। এ পণ্য বিক্রি হলে শ্রমিকদের বকেয়া প্রদানে এত জটিলতা থাকতো না। বর্তমানে ৭ থেকে ৯ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া পড়েছে। আর শ্রমিক আন্দোলন সমস্যার সমাধান করতে হলে সবার আগে মৌসুমের শুরুতেই পর্যাপ্ত ও ভালো মানের পাট কেনার বিকল্প নেই।’

 

/এসএমএ/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!