X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে তৈরি হয় এমপি লিটন হত্যার প্লট

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
২৮ নভেম্বর ২০১৯, ১১:২৬আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:৫৩

মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ও ডা. আবদুল কাদির খাঁন
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রায় আড়াই মাস ধোঁয়াশায় ছিল পুলিশ। পরে হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি ফেলে যাওয়া বন্দুকের সূত্র ধরে রহস্যের সমাধান হয়।

পুলিশ জানায়, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই সংসদ সদস্য লিটনকে চিরতরে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন একই আসনের সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খাঁন। আর এজন্য নানামুখী প্রেক্ষাপট তৈরিতেও কাজ করেন তিনি। সর্বোপরি সুন্দরগঞ্জের রাজনৈতিক মেরুকরণের পুরো সুযোগটিই কাজে লাগান কাদের।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সুন্দরগঞ্জের রাজনৈতিক নেতারা জানান, এমপি লিটনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে থাকা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকর্মীদের প্রলোভন ও উসকানি দিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করেন ডা. আবদুল কাদের খাঁন। ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর ভোরে এমপি লিটন মাতাল অবস্থায় গাড়ি নিয়ে সুন্দরগঞ্জ থেকে উপজেলার বামনডাঙ্গায় নিজের বাড়িতে ফেরার পথে ৯ বছরের শিশু সৌরভকে গুলি করেন। পরে সৌরভকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স রংপুর মেডিক্যালে যাওয়ার পথে লিটন ও তার লোকজন আটকে রাখেন বলেও অভিযোগ ওঠে।  এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে গড়ে তোলা হয় আন্দোলন। এমপি লিটনের লাইসেন্স করা অস্ত্র জব্দ ও ফেরত না দেওয়ার নেপথ্যেও ভূমিকা রাখেন কাদের।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা আরও জানান, রাজনৈতিক কারণে কাদের খাঁনের সঙ্গে কিছু বিরোধ ছিল লিটনের। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার মাধ্যমে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে— সেটা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। এমনকি হত্যাকাণ্ডের পরও পারিবারিক বিরোধসহ কিছু বিষয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামনে নিয়ে আসা হয়। এর নেপথ্যের কুশীলবও ছিলেন কাদের খাঁন বলে মনে করেন তারা।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গার যুবলীগ নেতা রাজু আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনজুরুল ইসলাম লিটন এমপি হওয়ার পর থেকেই তার ইমেজ নষ্ট করার জন্য নানা প্রপাগান্ডা করতে থাকেন একই আসনের সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খাঁন। শিশু সৌরভকে গুলি করার কয়েকদিন পর এক সন্ধ্যায় ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কয়েকজন ক্যাডার নিয়ে উপস্থিত হন কাদের খাঁন। সেখানে এমপি লিটনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই প্রপাগান্ডা চালাতে থাকেন। কাদের বলেন, ‘গাইবান্ধা-১ আসনে আবার নির্বাচন হবে’। এ অবস্থায় হাবিবুর ও ইয়াকুবসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী তাকে ‘পঁচা মাল’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ করেন। তখন কাদের খাঁন অস্ত্র বের করে তাদের গুলি করার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘লিটন জেলে যাবে এবং তার সাজা হয়ে যাবে।’ পরে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। 

শিশু সৌরভকে গুলির ঘটনার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে সেখানে এমপি লিটনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠে, যার নেপথ্যে স্থানীয় জাতীয় পার্টি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। এই আন্দোলন চাঙ্গা করতে প্রচুর অর্থও খরচ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, জাতীয় পার্টির মনোনয়নে কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খাঁন এমপি নির্বাচিত হন ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এরপর তার বিরুদ্ধে টিআর-কাবিখার অর্থ আত্মসাতসহ দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে। ২০১২ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) চন্দন কুমার সরকার কাদেরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন দফতরে টিআর-কাবিখার অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেন। পরে তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে চারটি মামলা দায়ের করে দুদক— যা এখনও বিচারাধীন আছে। তখন চন্দন সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনজুরুল ইসলাম লিটনের সঙ্গেই বেশি সময় কাটাতেন। কাদেরের ধারণা ছিল, চন্দনকে ব্যবহার করে লিটন তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করিয়েছেন। পরে লিটন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরও  চন্দন বেশ কিছু দিন তার সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিতে না পেরে চন্দন সাবেক এমপি কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সুযোগটি লুফে নেন কাদের। হত্যাকাণ্ডের দিন পর্যন্ত কাদের তাকে ব্যবহার করেছেন।   

এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের পর সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক বিরোধের কারণে হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত ছিলেন। জামায়াত সবসময় তাকে সরিয়ে দিতে এবং আওয়ামী লীগের অবস্থান দুর্বল করতে নানাভাবে প্রেক্ষাপট তৈরির কাজ করেছে। সাবেক এমপি কাদেরের সঙ্গেও রাজনৈতিক কারণে তার কিছুটা বিরোধ ছিল। কিন্তু কাদের খাঁন এভাবে একজন এমপিকে হত্যা করে পথ পরিষ্কার করবেন,  তারা কেউ তা আঁচ করতে পারেননি।

 

/এফএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া