X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেই কোটিপতি পিয়ন এখন জেলে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:১৯আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:১০

গ্রেফতার ইয়াছিন মিয়া
জালিয়াতির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাবরেজিস্ট্রি অফিসের পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা পিয়ন ইয়াছিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে সদর মডেল থানায় গিয়ে ধরা দেন তিনি। ইয়াছিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আতুয়াকান্দি গ্রামের মোহন মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অডিট কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর গাঢাকা দেন অফিসের ‘কোটিপতি পিয়ন’ ইয়াছিন মিয়া (৪২)। এ ঘটনার পর ৩০ নভেম্বর সাবরেজিস্ট্রার মোস্তাফিজ আহমেদ বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অডিট শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম রেজিস্ট্রার অফিসের বিভাগীয় পরিদর্শক নৃপেন্দ্রনাথ শিকদার বাদী হয়ে সোনালী ব্যাংকের ভুয়া চালানের মাধ্যমে জালিয়াতি করে ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইয়াছিন মিয়ার বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অফিস সংশ্লিষ্টদের চাপে শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) ভোরে ইয়াছিন মিয়া সদর মডেল থানায় গিয়ে ধরা দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের একটি সূত্র জানায়, গত ২৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম রেজিস্ট্রার অফিসের বিভাগীয় পরিদর্শক নৃপেন্দ্রনাথ শিকদার অফিসে অডিট কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর অফিসের কয়েক কোটি টাকার হিসাবে সমস্যা বেরিয়ে আসে। অডিট শুরু হওয়ার পরই গাঢাকা দেন পিয়ন ইয়াছিন মিয়া। পরে তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ৩০ নভেম্বর সদর মডেল থানায় জিডি হওয়ার পরপরই পলাতক ইয়াছিন মিয়ার খোঁজে মাঠে নামে পুলিশ। ওইদিন রাতে ইয়াছিনের প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগমকে থানায় ডেকে এনে এবং দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা বেগমকে তার শহরের পশ্চিম পাইকপাড়ার বাসায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে জানা যায়, তৃতীয় স্ত্রী মকসুরা বেগমকে নিয়ে ইয়াছিন পালিয়ে গেছেন। ইয়াছিনের দুই স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুলিশ তার বিপুল সম্পদের বিষয়ে জানতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবরেজিস্ট্রি অফিসের একাধিক কর্মচারী ও দলিললেখক জানান, পিয়নের চাকরি করেই ইয়াছিন বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরেই ইয়াছিন মিয়ার তিনটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও তার নামে বেনামে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট।

প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগম সাংবাদিকদের জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে ইয়াছিন মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর তিনি (ইয়াছিন) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে পিয়ন পদে চাকরি পান। তিনি জানান, তার স্বামী তাকে (সাজেদা) পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামে চার শতাংশ জায়গার ওপর তিনতলা বাড়ি করে দিয়েছেন। সেই বাড়িতেই তিনি বসবাস করেন। কয়েক মাস আগে তিনি তার বড় ছেলেকে ফ্রান্সে পাঠিয়েছেন।

সাজেদা বেগম আরও জানান, তাকে বিয়ের ১০ বছর পর ইয়াছিন মিয়া আকলিমা বেগম নামে এক বিধবা নারীকে বিয়ে করেন। ওই নারীর আগের পক্ষের একটি মেয়ে আছে। আকলিমাকে বিয়ের পর ওই মেয়েও মায়ের সঙ্গে থাকতো। ওই মেয়ে বড় হওয়ার পর ইয়াছিন তাকে ইতালি প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেন। পরে ইয়াছিন মেয়ের স্বামীর বাড়ির সঙ্গে শহরের পশ্চিম পাইকপাড়া এলাকায় যৌথভাবে একটি ছয়তলা বাড়ি করেন। এছাড়াও পশ্চিম পাইকপাড়ায় ইয়াছিন মিয়া তার ভায়রার সঙ্গে আরেকটি ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেন। আকলিমাকে বিয়ের পাঁচ বছর পর ইয়াছিন মিয়া এক প্রবাসীর স্ত্রী মকসুরা বেগমের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরে মকসুরাকেও বিয়ে করেন তিনি। পৌর এলাকার মুন্সেফপাড়ার একটি ফ্ল্যাট কিনে সেখানেই তৃতীয় স্ত্রী মকসুরাকে নিয়ে বসবাস করছিলেন ইয়াছিন।

সদর সাবরেজিস্ট্রার অফিসের এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ইয়াছিন মিয়ার পোস্টিং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায়। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডেপুটেশনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত ছিলেন। ইয়াছিন মিয়া জালিয়াতি করে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে রাজি হওয়ার পরই অফিসের লোকজনের সহায়তায় তাকে থানায় আত্মসমর্পণ করানো হয়।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার মোস্তাফিজ আহমেদ জানান, ইয়াছিন মিয়া সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নকল, তল্লাশি ও রেজিস্ট্রেশন ফিসহ বিভিন্ন সরকারি ফি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় জমা দিতেন। সোনালী ব্যাংকের চালান জালিয়াতি করে তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম রেজিস্ট্রার অফিসের বিভাগীয় পরিদর্শক নৃপেন্দ্রনাথ শিকদার বাদী হয়ে সোনালী ব্যাংকের ভুয়া চালানের মাধ্যমে জালিয়াতি করে ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইয়াছিন মিয়ার বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযোগটি কুমিল্লা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আপাতত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন:
কোটিপতি পিয়ন!

 

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ