X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের অব্যবস্থাপনায় করোনা সংক্রমণের শঙ্কা

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
১১ মে ২০২০, ১২:৫৩আপডেট : ১১ মে ২০২০, ১৩:০৮

বিদ্যালয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক কয়ারেন্টিন হিসেবে ব্যবহার করা হয়  করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সংক্রমণ শুরুর পর থেকে বিদেশ, ঢাকা ও এর পাশের জেলা বা অন্য কোনও জেলা থেকে নীলফামারীতে আসা লোকজনকে প্রাতিষ্ঠানিক কয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১৩৮ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কয়োরেন্টিনে রাখা হয়। তবে কোয়ারেন্টিনে থাকাদের থাকা-খাওয়া ও দেখভালের বিষয়ে গাফিলতি আছে বলে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি নিয়মানুযায়ী ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন নিশ্চত করার আগেই খাদ্যাভাবে অনেককে কোয়ারেন্টিন থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে। এতে করে এলাকাবাসীর মধ্যে করোনা আতঙ্ক বাড়ছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে জেলা সদরের কুন্দপুকুর ইউনিয়নের শালহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা ১১০ জনের। সরেজমিনে গত শনিবার (৯ মে) বিকালে সেখানে গিয়ে তথ্যের গরমিল পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, ২২ এপ্রিল ৩৯ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল এই বিদ্যালয়ে। গত ৬ মে কোয়ারেন্টিন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও খাদ্যের অভাবে দুই দিন আগে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের। ওই বিদ্যালয়ে সম্প্রতি রাখা হয়েছিল সাত জনকে। খাদ্য সমস্যায় পাঁচ দিন পর গত শুক্রবার ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।

ওই ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মোজাফ্ফর হোসেন জানান, গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ৩৯ জন ১৪ দিনের জায়গায় ১২ দিন ছিল এই বিদ্যালয়ে। খাদ্য সংকট দেখা দিলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। একই কারণে সাত জনকেও পাঁচ দিনের মাথায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি জানান, শালহাটি বাজারে ১৭ হাজার টাকার পণ্য বাকি করে তাদের খাওয়ানো হয়। সেই টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারিনি।

একই এলাকার ব্যবসায়ী রতন চন্দ্র রায় বলেন, 'আমিও দুইশ' টাকা চাঁদা দিয়েছি। আমার মতো গ্রামের অনেকেই তাদের সহযোগিতা করেছে। পর্যাপ্ত সরকারি ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা সম্ভব হয়নি। এতে এলাকায় করোনার ঝুঁকি বাড়ছে।’

ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সহির উদ্দিন (৫৬) বলেন, 'করোনা সংক্রমণ এড়াতে গ্রামের মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ৩৯ জনকে খাদ্য সহযোগিতা করেছে। প্রথম দফার ৩৯ জনের খাওয়া বাবদ উপজেলা প্রশাসন থেকে ২০ কেজি চাল, দুই লিটার তেল, চার কেজি লবণ, দুই কেজি চিনি, চার কেজি চিড়া, পাঁচ কেজি ডাল ও দুই প্যাকেট লুডুস পাওয়া গেছে। এরপর স্থানীয় সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের পক্ষ থেকে ৭০ কেজি চাল, ৪০ কেজি আলু, আট কেজি ডাল, দুই কেজি লবণ পাওয়া যায়। সেটি শেষ হওয়ার পর স্থানীয় একটি দোকান থেকে বাকিতে ১৭ হাজার টাকার মালামাল কিনে তাদের খাওয়ানো হয়।'

তিনি বলেন, 'খাদ্য যোগানের অনিশ্চয়তায় ৩৯ জনকে ১৪ দিন রাখা সম্ভব হয়নি। তেমনি পরের ওই সাত জনকেও পাঁচ দিনের মাখায় ছেড়ে দিতে হয়েছে।'

এ বিষয়ে কুন্দপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী চৌধুরী বলেন,‌ 'ওই কেন্দ্রে কোয়ারেন্টিনে থাকা ৩৯ জনের সরকারিভাবে এক বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাকিটা আমরা যোগান দিয়েছি। সেটি আমাদের সাধ্যের বাইরে হওয়ায় পুরো সময়টা রাখা সম্ভব হয়নি। একই কারণে পরবর্তী সাত জনকেও ছেড়ে দিতে বাধ্য হই।’

জেলার ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের শালমারা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ২ মে থেকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তিনটি পরিবারের ১৩ জন সদস্য। ওই কেন্দ্রে অবস্থানরত সুজন শর্মা (৩৫) রবিবার (১০ মে) দুপুরে বলেন, 'আমরা ঢাকা থেকে নিজ এলাকায় এসেছি। যা টাকা নিয়ে এসেছিলাম দুই দিনের মধ্যে শেষ হয়েছে। ৯ দিন পর করলেও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে মাত্র ১০ কেজি চাল ও দুই কেজি আলু পেয়েছি। এলাকার মানুষের সহযোগিতা নিয়ে কোনোভাবে দিন কাটাচ্ছি।'

জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের ককই বড়গাছা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গত ৬ মে থেকে কোয়ারেন্টিনে আছেন ১০ জন। চাঁদপুরে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে তারা ফিরেছেন বাড়িতে। সেখানেও তারা রয়েছেন খাদ্য সংকটে।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রাশেবুল হোসেন বলেন,‌ 'রবিবার পর্যন্ত সদর উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৮১ জন।' তিনি বলেন 'তবে কোথায় কতজন আছেন এই তথ্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিতে পারবেন। আমরা পারবো না। কারণ কোয়ারেন্টিনে তারাই পাঠিয়ে আমাদের তথ্য দেন। আমরা তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখভাল করি।'

এ ব্যাপারে, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলিনা আকতার বলেন, 'আমরা কাউকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠাই না। ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিদেশ ফেরতদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোয়ারেন্টিনে রেখে খাদ্য যোগানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কোথাও সংকট দেখা দিলে সেটি চেয়ারম্যানদের দেখতে বলা হয়েছে।'

জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, 'শুধু জেলা, উপজেলা প্রশাসনই না; পুলিশ, সেনাবাহিনী, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় আছেন। এটি হলো সবার সমন্বিত প্রয়াস। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সবাই এগিয়ে আসুন। কোয়ারেন্টিনে থাকা অনেকের সামর্থ্য আছে। তারা যদি বাড়ি থেকে এনে খেতে চান, খেতে পারেন। আপনি, আমি সবার অংশগ্রহণে এ কাজটি চালিয়ে যেত হবে। এতে একার ওপর প্রেসার পড়বে না।'

সিভিল সার্জন ডা. রণজিৎ কুমার বর্মণ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিরা মূলত সুস্থ। তারপরও বাইরে থেকে এলে নিয়ম অনুয়ায়ী ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়। এদের খাওয়া-থাকার বিষয় স্থানীয় প্রশাসন, উপজেলা-জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহীর দেখার কথা। আমার দায়িত্ব সকাল-বিকাল তাদের স্বাস্থ্য চেকআপ করা। তাদের মধ্যে করোনার কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায় কিনা সেটা স্বাস্থ্য বিভাগ দেখবে।’

তিনি বলেন, 'গত ২৪ ঘন্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা ২২ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৩৮ জন।

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে বেড়েছে রিকন্ডিশন্ড এসির চাহিদা
তীব্র গরমে বেড়েছে রিকন্ডিশন্ড এসির চাহিদা
ইউক্রেনের খারকিভে রুশ ড্রোন হামলায় আহত ৩
ইউক্রেনের খারকিভে রুশ ড্রোন হামলায় আহত ৩
চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান সমর্থক ও জেলেদের সংঘর্ষ
চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান সমর্থক ও জেলেদের সংঘর্ষ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত