ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। আম্পানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতক্ষীরা উপকূলের বেড়িবাঁধগুলো। উপকূলের মানুষের পানির আধারগুলো নষ্ট হওয়ায় সুপেয় পানির জন্য হাহাকার চলছে। পুরো উপকূলজুড়ে পানি থই থই করছে কিন্তু সুপেয় পানি নেই কোথাও।
সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপকূলের গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ি, আশাশুনি সদর, প্রতাপনগর, শ্রীউলার অধিকাংশ বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে এলাকায় পানি প্রবেশের ফলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আম্পানের কারণে বুড়ি গোয়ালিনী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের দাতীনাখালী ও দুর্গাবাটি এই দুটি স্থান ভেঙে যাওয়ায় আশপাশের ৯টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। ফলে এসব এলাকায় বসবাসরত প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবারের বাড়িতে কোথাও ১/২ ফুট আবার কোথাও আরও বেশি নদীর পানি প্রবেশ করে। ফলে এসব বাড়ি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে তীব্র পানীয় জলের সংকট। চলাচলের রাস্তা এবং পানির উৎস ক্ষতি হওয়ার কারণে সুপেয় পানির অভাবে দিন কাটাচ্ছেন তারা। বুড়ি গোয়ালিনীর মতো পুরো উপকূলজুড়ে একই চিত্র।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিম ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। এদিকে বেসরকারি সংস্থা সুশীলন রি-কল ২০২১ প্রজেক্টের নিজস্ব পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট থেকে ভ্যানের মাধ্যমে প্রতিদিন অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দুর্গত মানুষের মাঝে দুই হাজার লিটার করে খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
দাতিনাখালী এলাকার বাসিন্দা রজিনা বেগম বলেন, ‘চারদিকে পানি থই থই করছে কিন্তু কোথাও খাওয়ার পানি নেই। বাবা আমরা এখন আর কিছু চাই না, শুধু পানি দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রাখেন।’ গাবুরা এলাকার লক্ষ্মীখালী গ্রামের আব্দুল আল মামুন বলেন, ‘গাবুরায় বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীর সঙ্গে জোয়ার ভাটা হচ্ছে। এতে গোসলের পুকুরে লোনা পানি প্রবেশ করায় ব্যাপক কষ্টে আছি। পানির অভাবে গোসল করতে পারছি না। গায়ে চর্ম রোগ দেখা দিচ্ছে। খাবার পানিরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গভীর নলকূপগুলো নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অন্য জায়গা থেকে পানি আনতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি বেসরকারিভাবে ত্রাণ দিলেও যাতায়াতের সুব্যবস্থা না থাকায় তারা নদীর পাশে বসবাস করা মানুষদের ত্রাণ দিয়ে চলে যাচ্ছে। এতে আমরা যারা মাঝখানে আছি তারা কিছুই পাচ্ছি না।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শ্যামনগর সিডিও ইয়ুথ টিমের পরিচালক গাজী আল ইমরান বলেন, আম্পানে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঁধগুলোর। বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ায় খাবার পানির পুকুরে লোনা পানি ঢুকে গেছে। আমরা ১৬ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছি। প্রশাসনের সহায়তায় সংকটে থাকা পরিবারপ্রতি এক কলস করে পানি বিতরণ করছি।
শ্যামনগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আ ন ম আবুজর গিফারী বলেন, আম্পানের কারণে বাঁধ ভেঙে পানির আধার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষেরা সুপেয় পানির অভাবে আছেন। আমরা ইতোমধ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় পানি বিতরণ করছি। সেনাবাহিনীও পানি বিতরণ করছে এবং ত্রাণের সঙ্গেও পানি থাকছে। খুব দ্রুত এসব সংকট কেটে যাবে।