রাজশাহীতে জমে উঠেছে আমের বাজার। অন্য জেলা থেকে রাজশাহীতে ক্রেতা আসার পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমেও চলছে বেচাকেনা। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট পুঠিয়ার বানেশ্বর। এই হাটে আম বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এবার আমের দাম কম কিন্তু বাইরে থেকে ক্রেতা আসায় দাম বাড়তে শুরু করেছে।
বানেশ্বর হাটে আসা আমচাষি শিমুল জানান, রাজশাহীর হাটগুলোতে এখন চার জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিমণ গোপালভোগ এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার, হিমসাগর এক হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার, লক্ষণা ৭০০ থেকে এক হাজার এবং গুটি জাতের সব আম বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়।
আম ব্যবসায়ী নাসির আলী জানান, গত শনিবার থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম, বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা থেকে পাইকারি ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। এখন প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। গত শনিবার থেকে গোপালভোগ ও হিমসাগর আমের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এখন গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায়।
ঢাকা থেকে আসা আমের বেপারি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রত্যেক বছর বানেশ্বর হাটে এসে আম নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় দিয়ে থাকি। কিন্তু এবার একটু চিন্তায় ছিলাম, এখানে আসতে পারবো কিনা! পরে নিশ্চিত হয়ে এসেছি, আমাদের জন্য থাকার আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। সেখানে থেকে ব্যবসা করছি।’
এদিকে, সরাসরি বেচাকেনার পাশাপাশি অনলাইন পোর্টাল, ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক-ম্যাসেঞ্জারের বিভিন্ন গ্রুপে প্রচারণা চালিয়ে অর্ডার নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অনলাইনে অর্ডার, বিকাশে পেমেন্ট আর কুরিয়ারে পণ্য পৌঁছে দেওয়া– এসব অনেকের কাছেই নতুন হওয়ায় সম্ভাবনার পাশাপাশি সমস্যার কথাও বলছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এসব সমস্যা সমাধানে কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো সাহায্য করছেন বলে জানান তারা।
রাজশাহী আমবাজার ফেসবুক পেজের আব্দুল জলিল বলেন, ‘অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আমরা পাঁচ বছর থেকে ব্যবসা করে আসছি। অনলাইনে এখন প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। অনলাইন মার্কেটে নতুন গ্রাহকদের নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তবে কিছু কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান এটার সমাধানও করে দিয়েছে। তবে স্থায়ী গ্রাহকদের নিয়ে তেমন সমস্যা হয় না।’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক জানান, গত মৌসুমে চার-পাঁচ জন ব্যবসায়ী অনলাইনে ব্যবসা করছিল। কিন্তু এবার ৩৫ থেকে ৪০ জন্য অনলাইনে আমের ব্যবসা করছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় আমবাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। অপরিপক্ব আম বাজারজাত করা ঠেকাতে গত চার বছরের মতো এবারও আম নামানোর সময় নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে গুটি আম, ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা এবং ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা খিরসাপাত নামানোর সময় শুরু হয়েছে। ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ১৫ জুন এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা এবং ‘বারী আম-৪’ জাতের আম।
গত ২২ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে গাছের ১২ থেকে ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। এতে চাষিদের প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আম্পান যেতে না যেতেই ২৬ মে দিবাগত রাতে কালবৈশাখীতে ঝরে আরও অনেক আম। এখন হাটে আম উঠতে শুরু করেছে।
আর ২ জুন থেকে রাজশাহী থেকে বিনা ভাড়ায় প্রান্তিক কৃষকের উৎপাদিত আম ঢাকার পাইকারি বাজারে পৌঁছে দিচ্ছে ডাক অধিদফতর। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী হয়ে ৫ জুন ট্রেনে করে ঢাকায় আম পাঠানো হবে দেড় টাকা ভাড়া কেজিতে।