ওদের কেউ পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কেউ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ বা দেশের কোনও প্রসিদ্ধ কলেজে। করোনার কারণে এখন ক্লাস বন্ধ, তাই সাত বন্ধু সময় নষ্ট না করে এখন ব্যস্ত কৃষিকাজে। মাগুরার মহম্মদপুরের বালিদিয়া ইউনিয়নের কাওরা গ্রামের অনার্স-মাস্টার্স পড়ুযা সাত যুবক কোনও শ্রমিকের সহযোগিতা ছাড়াই নিজেদের শ্রমে তৈরি করছে একশ শতাংশ জমির ওপর দুটি কলার বাগান। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, এ কাজে নিয়মিত চাষ হয় এমন জমি ব্যবহার করেননি তারা। পতিত অনাবাদি জমি লিজ নিয়ে সেই জমিতে গড়ে তুলেছেন তাদের বাগান।
উদ্যোক্তাদের অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ ইকবাল নাহিদ। তিনি বলেন, করোনার কারণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হয়ে গেলে আমরাও গ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হই। কিন্তু কতদিন আর বসে থাকা যায়। আমার মতো অন্য বন্ধুরাও ক্লাস বন্ধ থাকায় গ্রামে কোনও কাজ ছাড়াই বসে আছে। এ পরিস্থিতিতে ভাবতে শুরু করি, কিছু করা যায় কিনা। সাত বন্ধু মিলে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, গ্রামে কোনও কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা। এসময় খবর পেলাম গ্রামের একজন প্রধান শিক্ষকের জমি পড়ে আছে । স্যারের কাছে গিয়ে বলতেই তিনি আমাদেরকে নামমাত্র মূল্যে জমি লিজ দিয়ে দিলেন। একইভাবে গ্রামের বড় ভাই মাসুদও আমাদেরকে তার কিছু পড়ে থাকা জমি লিজ দিলেন। সব মিলিয়ে ১০০ শতাংশ জমি হলো। বাড়িতে টাকা না চেয়ে নিজেদের সঞ্চয়ের টাকায় জমি দুটো নিয়ে নিলাম লিজ। অনেকদিন এসব জমি ব্যবহৃত না হওয়ায় চাষের অনুপযুক্ত ছিল। আমরা কোনও শ্রমিক ছাড়াই সাত বন্ধু মিলে শ্রম দিয়ে তৈরি করলাম জমিটি। এখন কলার বাগান করছি সেখানে। ৭২০টি কলার গাছ রোপণ করেছি।
সাত বন্ধুর একজন শায়েখ উদ্দীন সোহান। পড়ছেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওযার্দী কলেজে রসায়ন বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে। সোহান জানান, তিনি আর নাহিদই শুধু নয়, তাদের প্রকল্পসঙ্গী অপর বাকি পাঁচ জনও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। এদের মধ্যে নাইমুর রহমান পড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, সোহেল আদনান পড়ছেন ঢাকা তিতুমীর কলেজে। এছাড়া হাসিবুল ইসলাম শান্ত, রোকোনুজ্জামান ও আরাফাত রাজু মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে বিভিন্ন বিভাগে অনার্সের ছাত্র।
সোহান বলেন, আমরা কোনও কাজকেই ছোট করে দেখি না। বরং কৃষিকাজকে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি মনে করি। আমরা ভবিষ্যতে যে যেখানেই থাকি না কেন গ্রামে কৃষি নিয়ে আরও বড় কিছু করতে চাই।
মহম্মদপুর আরএসকেএইচ ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক নাসিরুল ইসলাম তার জমিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলের কলার বাগান গড়ে তোলা প্রসঙ্গে বলেন, জমিটা পড়েই ছিল। এখন আমরা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নতুন নতুন জমিতে আবাদ প্রয়োজন। ছেলেগুলোও খুব উৎসাহী। খুব ভালো লাগলো ওদের উৎসাহ দেখে। তাই, কিছু ভাবার আগেই রাজি হয়ে গেলাম।
বালিদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পান্নু মোল্লা বলেন, ওদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমি ওদেরকে আশ্বাস দিয়েছি, যে কোনও প্রয়োজনে পাশে থাকবো।
কর্মসংস্থান ব্যাংক মাগুরা শাখার ব্যবস্থাপক তবিবর রহমান বলেন, নিঃসন্দেহে এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। শুধু এরা নয়, যুব সমাজের যে কেউ এ ধরনের উদ্যোগ নিলে আমরা তাদেরকে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি।