X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

ডালিয়া পয়েন্টে রেড অ্যালার্ট, তিস্তা পাড়ে ’৯৮-র মতো বড় বন্যার পদধ্বনি

নীলফামারী প্রতিনিধি
১৪ জুলাই ২০২০, ০৪:০০আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২০, ১০:২৩

তিস্তা ব্যারাজে খুলে দেওয়া হয়েছে ৪৪টি স্লুইস গেট

১৯৯৮ সালের মতো বড় বন্যার পদধ্বনি শুরু হয়েছে তিস্তা নদীর প্রবেশ দ্বারে। উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে ওপাশে ভারত ছেড়ে দিয়েছে গজলডোবার ব্যারাজের পানি। আর সেই পানির তোড় সামলাতে না পেরে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার মধ্যবর্তী তিস্তা ব্যারাজে খুলে রাখা হয়েছে ৪৪টি স্লুইস গেট। যা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে তিস্তা অববাহিকায় নামছে ২ হাজার ৪৫৭ কিউসেক পানি। ডালিয়া পয়েন্টে সোমবার (১৩ জুলাই) সকাল থেকে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবোর গেজ পাঠক নুরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে, তিস্তার নদীগর্ভ সংস্কার কখনও না হওয়ায় এই পানি প্রবল বেগে তীর উছলে ঢুকে পড়ছে আশেপাশের গ্রামগুলোতে। ফলে প্রথম দফার বন্যায় প্লাবিত হওয়ার পর ঘরে ফেরা মানুষ এবার ঘর ছেড়ে বা ভেঙে নিয়েই সরতে বাধ্য হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। অথচ এমন বড় বন্যার সতর্কতা থাকার পরেও ত্রাণ প্রস্তুতি মোটেও সুবিধাজনক নয় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের। কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ প্লাবিত হলেও এখনও কোনও ত্রাণ বিতরণ হয়নি ডিমলা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সংগৃহীত ত্রাণের পরিমাণও স্বল্প। 

পানিতে ভাঙছে তিস্তার দুই কূল  পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ পাঠক নুরুল ইসলাম জানান, গত রবিবার (১২ জুলাই) ডালিয়া পয়েন্টে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। সোমবার তা ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ভারত থেকে নেমে আসা পানি অব্যাহত থাকলে এটি সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তীব্র স্রোতে ভাঙন তীব্র হয়েছে তিস্তা অববাহিকায়

এদিকে, তিস্তার ভয়াবহ ঢলের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে তিস্তা অববাহিকার মানুষ উঁচু স্থানে সরে যেতে শুরু করেছে। পাউবোর পক্ষে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট ও মাইকিং।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ব্যারাজের পূর্বদিকে ফ্ল্যাট স্লুইস (ফ্ল্যাট বাইপাস) এলাকাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা নজরদারিতে রেখেছেন। পাশাপাশি ব্যারাজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পাউবো। এছাড়া ব্যারাজ তীরবর্তী এলাকার পরিবারগুলোকে মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সোমবার ভোর থেকে ভারতের তিস্তা নদীর দো-মোহনী পয়েন্টে বিপৎসীমার (৮৫.৯৫ সেন্টিমিটার) ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করছে। ভারতের ওই পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বন্যার পানি ধেয়ে আসায় নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে আজ বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় দুই উপজেলার (ডিমলা, জলঢাকা) পাঁচ হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ গৃহহারা হয়েছে।

তিস্তার পানি ঢুকে গেছে ফসলি জমি ও বাড়িঘরে

ভারতের গজলডোবার মাধ্যমে গতকাল রবিবার রাত পর্যন্ত প্রতি সেকেন্ডে ২ হাজার ৪৫৭ কিউসেক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই হিসেবে ২০ মিনিটে বাংলাদেশে ভারতের পানি প্রবেশ করে প্রায় সাড়ে ২৯ লাখ কিউসেক। পাহাড়ি ঢলে ও সমতলের প্রচুর বৃষ্টিপাতসহ গজলডোবার স্লুইস গেট খুলে দেওয়ায় ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা ১৯৯৮ সালের বন্যার মতো হতে পারে।

উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক মুঠোফোনে জানান, তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও গজলডোবা ব্যারাজের পানি অতিক্রম করায় নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছে।

রাস্তায় জমেছে হাঁটু পানি। এরপরেও শুরু হয়নি ত্রাণ বিতরণ

এদিকে, ডিমলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী সহ কিশামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর, চরখড়িবাড়ী, পূর্ব খড়িবাড়ী, পশ্চিম খড়িবাড়ী, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার, বাইশ পুকুর, ছাতুনামা ও ভেন্ডাবাড়ী এলাকার বানভাসী মানুষ গবাদি পশু নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।

অপরদিকে, জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া, বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার অসংখ্য ফসলি জমির বীজতলা ও রোপিত আমনের রোপা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোয় কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়ির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর স্রোত। ভেসে গেছে মাছের খামার। গ্রামের রাস্তায় বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। এতে শিশু ও বয়স্করা পড়েছে বিপাকে। বন্যার্তরা বেঁচে থাকার তাগিদে সমানে লড়াই করে যাচ্ছে। বন্যার কারণে ঘর ভেঙে নিরাপদ আশ্রয়ে সরছে মানুষ

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান, উপজেলার সকল কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে মনিটারিং টিম গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকা নজরদারি করছেন। তিনি জানান, প্রথম দফা বন্যায় ১ দশমিক ৭৭০ মেট্রিক টন চাল, নগদ এক লাখ ৫৮ হাজার টাকা ও ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ৬০ মেট্রিক টন চাল, ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও এক লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে। তা দ্রুত বিতরণের কাজ শুরু হবে। বানভাসিদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে।

/টিএন/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল